মৃত বিজেপি কর্মীর বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
মাটির বাড়িতে বিছানায় শুয়ে ছিলেন সদ্য স্বামীহারা আলপনা ঘোড়াই। পাশেই বসে বছর বারো-তেরোর ছেলে। স্বামী কালীপদ (মদন) ঘোড়াই (৩২) মারা গিয়েছেন চারদিন আগে মঙ্গলবার সকালে। এখনও তাঁর মৃতদেহ দেখতে পাননি আলপনা। কবে দেখতে পাবেন, তা-ও এখনও জানেন না। কারণ, স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে চলছে শাসক-বিজেপি রাজনৈতিক টানাপড়েন। যার জেরে কালিপদের দেহের পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশের উপরে সোমবার পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে আদালতের তরফে।
পটাশপুর-১ ব্লকের কনকপুর গ্রামের বিজেপি কর্মী কালীপদকে (মদন) গত ২৬ অক্টোবর পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তাঁর ভাইপোর বিরুদ্ধে নাবালিকাকে অপহরণের অভিযোগ ছিল। কালীপদের পরিবারের অভিযোগ, অভিযুক্ত ভাইপোকে না পেয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। কাঁথি সংশোধনাগারে জেল হেফাজতে থাকা কালীপদ অসুস্থ হয় এবং পরে কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ওই ঘটনায় কালীপদের পরিবার এবং বিজেপি’র অভিযোগ, পুলিশের মারধরেই অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের হয়। যার ভিত্তিতে হাইকোর্ট কালিপদের মৃতদেহের ফের ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়। কিন্তু সরকারি আইনজীবীর আবেদনের ভিত্তিতে সেই নির্দেশে সোমবার পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে।
বিজেপি’র আইনজীবী বিভাগের আহ্বায়ক ব্রজেশ ঝা শনিবার বলেন, ‘‘কালীপদ ঘোড়ইয়ের মৃতদেহের ফের ময়নাতদন্তের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে শুক্রবার রাতেই কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার। ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার পর্যন্ত স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিয়েছে। আমরা যে সিঙ্গল বেঞ্চে আবেদন করেছিলাম, সেখানেই সোমবার সকালে মামলা ফের ফিরবে। বিচারপতি মামলা শুনবেন।’’
শনিবার মৃতের দাদা স্বপন ঘোড়াই বলেন, ‘‘বিজেপি করার কারণে পুলিশ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে ভাইকে। আপাতত সোমবারে আদালতে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছি। তার পরে কলকাতা থেকে দেহ নিয়ে যাওয়ার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা দোষী পুলিশ অফিসারের শাস্তি চাই।’’ মৃতদেহের ফের ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আপাতত কালিপদের দেহ রয়েছে কলকাতাতেই। সেখানে রয়েছেন কালিপদের দাদা স্বপন ঘোড়াইও। এ দিন আলপনা বলেন, ‘‘জানি ওঁর দেহ কবে গ্রামের বাড়িতে আনা হবে। আমাকে জানানো হয়েছে, দেহ ফের ময়নাতদন্ত হবে।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, কালিপদ আগে এলাকায় বাম সমর্থক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি বিজেপিতে সক্রিয় সদস্য হিসেবে যোগ দেন। পরিবারের দাবি, বিজেপি করার কারণে শাসক দলের তরফে মাঝেমধ্যে হুমকি দেওয়া হত। তিন ভাইয়ের মধ্যে কালিপদই ছিল ছোট। পেশায় দিনমজুর কালিপদ নির্মাণ শ্রমিকেরও কাজ করতেন। আর গবাদি পশু পালন করে স্বামীকে সাহায্য করেন স্ত্রী আলপনা। তাঁর দাবি, কাঁথিতে জেল হেফাজতে থাকাকালীন পাড়ার এক যুবক দেখা করতে গেলে জেল থেকে কবে ছাড়া পাবে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। অভিযোগ, পুলিশের মারে যে শারীরিক কষ্ট হচ্ছে, কালিপদ সে বিষয়টি ওই দিন ওই যুবককে জানিয়েছিলেন।
এদিকে, দলীয় কর্মীর মৃত্যুতে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনেরও দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি। বিজেপি’র কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশের অত্যাচারে আমাদের একজন নিরপরাধ ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। বিজেপি করার অপরাধে পুলিশ ওঁকে পিটিয়ে মেরেছে। দোষী পুলিশের শাস্তির দাবিতে মানবাধিকার কমিশনেও দলের তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’