নিউ দিঘার এই হোটেলগুলি ঘিরেই চলছে চর্চা। —নিজস্ব চিত্র।
রেশন দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ধরা পড়েছেন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানও। আর এই আবহেই চর্চায় সৈকত শহর দিঘার তিন-তিনটি হোটেল। যা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এই হোটেলগুলিতে জ্যোতিপ্রিয়র বিনিয়োগ ছিল বলেই দাবি শুভেন্দুর। ‘এসএবি উদ্যোগ’ নামে একটি সংস্থার মালিকানায় রয়েছে হোটেল তিনটি। সংস্থার নাম তিন মালিকের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে তৈরি বলেই জানা যাচ্ছে। সেই মতো সম্রাট গুপ্ত ও অজয় দে বলে দুই মালিকের নাম সামনে এলেও ইংরেজির ‘বি’ আদ্যক্ষরের নামটি কার তা নিয়ে স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলছেন না। তবে জল্পনা, এই ‘বি’ আদতে বাকিবুরই।
সোমবার বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কলকাতায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “পার্থ-অর্পিতা, কেষ্ট-সেহগাল, বাকিবুর-বালু, সব একই মডেল। দিঘায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বেনামে হোটেল দেখার ইচ্ছে আছে না কি?” মোবাইলের পর্দায় পরপর তিনটি হোটেলের ছবি দেখিয়ে শুভেন্দু বলেন, “এই হোটেলগুলি যাঁদের নামে আছে তাঁদের নামও বলছি। এই হোটেলগুলির জমির মালিক হচ্ছেন অজয় দে, দেবাশিস দাস, সম্রাট। হোটেল মেঘবালিকা, বিচ ভিউ এবং ভিউ রিসর্ট।” শুভেন্দুর আরও দাবি, “এঁরা প্রকৃতপক্ষে লিজ় প্রাপক। পরে ৫০ টাকার সট্যাম্পে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তাঁর আগের পিএ অভিজিৎ এবং ওঁর স্ত্রী এই হোটেলগুলি তাঁদের নামে করে নিয়েছেন।”
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলছেন, “শুভেন্দু হোটেলের ছবি দেখিয়ে নানা দাবি করছেন। কিন্তু উনি আগে বলুন রাখাল বেরার দিঘায় ক’টা হোটেল ও অন্য ব্যবসা আছে, রাখালের সঙ্গে শুভেন্দুর যোগটাই বা কী! রাখালকে গ্রেফতার করা হলে কেন শুভেন্দুকে ধরা হবে না।” কুণালের আরও প্রশ্ন, “কাঁথি পুরসভায় সারদার টাকা বিনিয়োগ নিয়েই বা কেন কিছু বলছেন
না শুভেন্দু!”
স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরই ওল্ড এবং নিউ দিঘায় এই হোটেলগুলি গড়ে ওঠে। প্রতিটির জন্যই জমি দিয়েছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। সেই সময় পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন শিশির অধিকারী। শিশির অবশ্য বলছেন, “ন্যায্য মূল্যে অনেকে ব্যবসা করার জন্য
পর্ষদ থেকে জমি পেয়েছেন। নিয়ম মাফিক টেন্ডার ডাকা হয়েছে। সেই টেন্ডারের কাগজপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হত রাজ্য সরকারের কাছে। তারা অনুমোদন দিত। এখন শুনছি তাদের মধ্যেই নাকি এই সব
লোকজন ছিল।” পর্ষদের তৎকালীন এগজ়িকিউটিভ অফিসার সুজনকুমার দত্ত জানালেন, “যাবতীয় তথ্য যাচাই করে নিয়ম মেনেই অজয় দে এবং সম্রাট গুপ্তদের হোটেল তৈরির জন্য জমি দেওয়া হয়েছিল।” পর্ষদের বর্তমান এগজ়িকিউটিভ অফিসার মানসকুমার মণ্ডল জুড়ছেন, “বিনিয়োগের ক্ষেত্রে টাকার উৎস খতিয়ে দেখা আমাদের কাজ নয়। শুধুমাত্র বৈধ কাগজপত্র খতিয়ে দেখে জমি দেওয়াই আমাদের কাজ।”
নিউ দিঘায় হোটেল ‘বিচ ভিউ’য়ের দেওয়ালে লেখা ‘এসএবি উদ্যোগ’। সেখানে কয়েক জন পর্যটকও ছিলেন। হোটেলের ম্যানেজার সৈকত গুপ্ত দাবি করলেন, “তিন বছরের কাছাকাছি কাজ করছি। কোনও দিনই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বা রাজনীতির কাউকে আসতে দেখিনি।” তবে দিঘার হোটেল মালিক সংগঠনের সভাপতি তথা স্থানীয় পদিমা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সুশান্ত পাত্রের স্বীকারোক্তি, “শুনেছি অজয় আর সম্রাট দু’জনেই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ। তাঁরা এখানে সে কথা বলতেন। আমাদের পুজো-পার্বণে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। এ বারও দুর্গাপুজোয় অর্থ সাহায্য করেছেন।”
হোটেলগুলির অন্যতম মালিক অজয় উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসতের বাসিন্দা। তিনি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে ঠিকাদারি করেন। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে অজয় মানলেন, “মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। দিঘায় আমরা কয়েক জন মিলে হোটেল ব্যবসা চালাচ্ছি। শুধু আমি আর সম্রাট নই, আরও অনেকেই আছেন।” বাকিবুরও কি আছেন? এ বার অজয়ের জবাব, “সেটা জানতে হলে আপনাকে বারাসতে আসতে হবে।”