ফাইল চিত্র।
টিকার চাবিতে না কি পড়ুয়াদের জন্য খুলবে স্কুলের দরজার তালা! কিন্তু সেই টিকাকরণের গতিই শ্লথ জেলায়।
গত জানুয়ারিতেই ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে থাকা স্কুল পড়ুয়াদের করোনার প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় দেওয়ার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোথায় কি! রাজ্যের মধ্যে টিকাকরণের সবচেয়ে এগিয়ে শুধু নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলাতেই ওই বয়সের টিকাকরণ বাকি রয়েছে ২০ হাজারের কাছাকাছি। আর পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলায় সেই সংখ্যাটা ৪০ হাজারের বেশি।
টিকাকরণ না হলে স্কুল খোলা সম্ভব নয় বলে গত সপ্তাহে হাইকোর্টে একটি মামলার শুনানিতে জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু টিকাকরণের হার দেখলে অবাক হবেন অনেকেই। গত ৩ জানুয়ারি থেকে রাজ্য জুড়ে ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে স্কুলপড়ুয়াদের টিকাকরণ শুরু হয়েছে। জানুয়ারি মাসের মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রাপূরণের জন্য প্রতিটি স্বাস্থ্য জেলাকে নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন। তবে বুধবার পর্যন্ত গোটা রাজ্যে মাত্র ৬৪ শতাংশ স্কুলপড়ুয়াকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা। সেখানে ৭৮ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছে।
আর ৭০ শতাংশের বেশি টিকাকরণ হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি, বিষ্ণুপুর সদর স্বাস্থ্য জেলা। বাকি জেলাগুলি তে ৫০-৬৯ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছে। এদের মধ্যে আবার কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম, মালদা, হাওড়া, হুগলি এবং উত্তর দিনাজপুরের মতন জেলাগুলি টিকাকরণের ক্ষেত্রে লাল তালিকাভুক্ত রয়েছে।
নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলায় ৯৯ হাজার ৫১৮ জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। বুধবার পর্যন্ত ৭৭ হাজার ৫৯১ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলায় এক লক্ষ ৬৯ হাজার ৫৩০ জনকে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। টিকা পেয়েছে এক লক্ষ ২৮ হাজার ৩১০ জন। শুধু বুধবার নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলায় ৪১০ জন এবং পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলায় মাত্র ১৫৭ জন স্কুল পড়ুয়া টিকা পেয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে টিকাকরণের হার ক্রমশ কমছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলছেন, ‘‘টিকাকরণের শুরুতে বলা হয়েছিল ২০০৪ সাল থেকে যাঁরা স্কুল ভর্তি হয়েছেন, সেই পড়ুয়াদের টিকা দেওয়া হবে। পরে তা বাড়িতে ২০০৩ সাল পর্যন্ত করা হয়। তাই লক্ষমাত্রা কিছুটা বেড়ে গিয়েছে।’’ এর পাশাপাশি, করোনা কালে বহু পড়ুয়া স্কুল ছুট হয়েছে। তাই তাদের সন্ধান করে টিকা দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্বাস্থ্য কর্মীদের।
তবে এ ব্যাপারে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলায় আশা কর্মী এবং অন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাঁরা স্কুল ছুট ছেলে এবং মেয়েদের সংশ্লিষ্ট স্কুল, নিকটবর্তী টিকাকরণ কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে টিকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করছে। এ প্রসঙ্গে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘‘লক্ষ্য মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে। তবে আমরা ১০ শতাংশ টিকাকরণ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’