প্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। —ফাইল চিত্র।
আসন্ন বিধানসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম আসনে কি আর জনজাতি প্রার্থী নয়? বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার মৃত্যুর পরে তৃণমূলের অন্দরেই শুরু হয়েছে চর্চা।
ঝাড়গ্রাম আসনটি অসংরক্ষিত হলেও ২০১১ ও ২০১৬ সালে আদিবাসী মুখ সুকুমারকে প্রার্থী করেই জিতেছিল তৃণমূল। তবে সুকুমারের জনসংযোগ নিয়ে শাসকদলের অন্দরেই প্রশ্ন ছিল। শুক্রবার বিধায়কের অন্ত্যেষ্টি ঘিরে বিষয়টি আরও প্রকট হয়ে উঠল। ক্যানসারে আক্রান্ত সুকুমার বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হন। সন্ধ্যায় দেহ পৌঁছয় ঝাড়গ্রাম শহরের বাড়িতে। ঠিক ছিল দুবরাজপুর গ্রামে বাস্তুভিটে লাগোয়া জমিতে তাঁর শেষকৃত্য হবে। বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ-প্রশাসনের তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু একাংশ বাসিন্দার আপত্তিতে শুক্রবার সকালে পরিজনেরা সিদ্ধান্ত বদলে জানান, দুবরাজপুরে নয়, জারালাটা গ্রামে সুকুমারের নিজস্ব জমিতে শেষকৃত্য হবে। কিন্তু জারালাটাতেও ‘গান স্যালুট’ দিয়ে শেষকৃত্যের তোড়জোড় শুরু হতেই বাধা দেন স্থানীয়রা। দাবি করেন, আদিবাসী সমাজের নিয়ম অনুযায়ী বাস্তুজমিতে সৎকার করা নিয়ম। কিন্তু ওই জমি সুকুমারের নামে থাকলেও তা বাস্তু নয়।
গোলমালের জেরে স্থানীয়রা সাজানো চিতার কাঠ ফেলে দেন। চিতা নেভাতে জল নিয়ে আসেন স্থানীয় মহিলারা। জেলাশাসক আয়েষা রানি ও জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌরের সঙ্গে দফায় দফায় গ্রামবাসীর আলোচনা হয়। তৃণমূলের এসটি সেলের রাজ্য সভাপতি রবিন টুডু, রাজ্য যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা স্থানীয়দের বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। জারালাটার গ্রামবাসী জানিয়ে দেন, রাজনৈতিক দলের কারও সঙ্গে তাঁরা কথা বলতে চান না। গ্রামবাসীরা জানান, ওই জমিতে সৎকার হলে সেটিকে শ্মশান করতে হবে। চিতায় দেহ তোলা হলেও সৎকার আটকে থাকে। শেষ পর্যন্ত সুকুমারের পরিবার ওই জমি শ্মশানের জন্য দান করতে সম্মত হলে বিকেল চারটে নাগাদ শেষকৃত্যের অনুমতি দেন স্থানীয়রা।
এ দিন ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, রাজ্য সভার সাংসদ মানস ভুঁইয়া, তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো-সহ দুই জেলার তৃণমূল নেতা-নেত্রী ও শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা। ডেপুটি স্পিকারের দেহ সৎকার নিয়ে এমন ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল ও প্রশাসন। জারালাটায় সাংসদ মানস বলেন, ‘‘আদিবাসী সমাজকে অসম্মান না করে পরিবার ও সমাজ একযোগে কাজটা করক আমরা সেটাই চাই। এটি প্রশাসনের বিষয় নয়। এটা পরিবারের সদস্য ও আদিবাসী সমাজের বিষয়। আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যা মিটেছে।’’ পরে জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘সৎকার নিয়ে সামাজিক কিছু সমস্যা হয়েছিল। সমস্যা মিটে শেষকৃত্য হয়েছে।’’
সুকুমারের মৃত্যুর পরে সহানুভূতির ভোটের কথা মাথায় রেখে তাঁর পরিবারের কেউ ঝাড়গ্রাম আসনে প্রার্থী হতে পারেন, সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার দিনভর তৃণমূলের নানাস্তরে জল্পনা ছিল। কিন্তু শুক্রবারের পরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী হবে, শুরু হয়েছে নতুন করে জল্পনা। তবে ডেপুটি স্পিকারের শেষকৃত্য নিয়ে এমন ঘটনা অনভিপ্রেত বলেই মানছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল। এমন আপত্তির আড়ালে বিশেষ কোনও কারণ রয়েছে কি-না সেটাও খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলালের বক্তব্য, ‘‘এ সব ভাবার সময় এখনও আসেনি। প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন শীর্ষ নেতৃত্ব।’’