Singer KK Death

Singer KK Dies: কে কে-র মৃত্যুর পরে প্রশ্ন জেলার অনুষ্ঠানেও 

মেদিনীপুরে অনেক অনুষ্ঠানেই ভিড় উপচে পড়ে। দেখা যায়, সভাকক্ষে যে সংখ্যক বসার ব্যবস্থা রয়েছে তার চেয়েও বেশি দর্শক ঢুকে পড়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২২ ০৮:২০
Share:

ফাইল চিত্র।

প্রিয় গায়কের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে উপচে পড়েছিল দর্শক। ভরা অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কে কে (কৃষ্ণকুমার কুন্নথ)। অসুস্থ গায়ককে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। তারপর মৃত্যু হয় তাঁর। জনপ্রিয় শিল্পীর এ ভাবে মৃত্যুর পর উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন! সেগুলি অডিটোরিয়ামের পরিকাঠামো এবং মোট দর্শকাসনের বেশি মানুষের উপস্থিতি সংক্রান্ত। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এখনই সতর্ক না হলে, মেদিনীপুর কিংবা ঝাড়গ্রামেও ঘটতে পারে এমন ঘটনা— মনে করছেন জেলার অনেকেই।

Advertisement

মেদিনীপুরে অনেক অনুষ্ঠানেই ভিড় উপচে পড়ে। দেখা যায়, সভাকক্ষে যে সংখ্যক বসার ব্যবস্থা রয়েছে তার চেয়েও বেশি দর্শক ঢুকে পড়েছেন। মেদিনীপুরে উন্নতমানের সভাকক্ষ বলতে একটিই। সেটি প্রদ্যোত স্মৃতি সদন। এখানে প্রায় ৭০০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এই সদন ছাড়াও শহরে আরও কয়েকটি সভাঘর রয়েছে। যেমন বিদ্যাসাগর হল, ফিল্ম সোসাইটি হল, লোধা স্মৃতি ভবন প্রভৃতি। তবে সেগুলি ততটা উন্নতমানের নয়। প্রদ্যোত স্মৃতি সদনটি দেখভাল করে জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতি অবশ্য বলেন, ‘‘ভাড়ায় দেওয়ার সময়েই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের নিয়মবিধি জানিয়ে দেওয়া হয়। জানানো হয়, কী করা যাবে আর কী করা যাবে না।’’ কেবল মেদিনীপুর শহরই নয়, অনুষ্ঠানের সময় সভাকক্ষের নিয়মবিধি সারা রাজ্যে কোথাও কতটা কার্যকর হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তীর। তিনি বলছিলেন, ‘‘‘মনে রাখতে হবে, জীবনের ঊর্ধ্বে গিয়ে কোনও কিছু হতে পারে না। হয়তো অনেক শিল্পীই ঝুঁকি নিয়ে অনেক কিছু করে ফেলেন, কিন্তু এ বার আমাদের সতর্ক হতে হবে। নজরুল মঞ্চের বাতানুকূল ব্যবস্থায় সমস্যা রয়েছে কি না বলে পারব না, কিন্তু দম বন্ধ করা পরিস্থিতিতে আমিও ওখানে অনুষ্ঠান করেছি। এ ছাড়া বর্ষার সময় খোলা জায়গায় অনুষ্ঠান করতে গেলে বৃষ্টি রুখতে এমন ভাবে প্যান্ডেল করা হয় যে, দম নেওয়ার জায়গা থাকে না। মনে হয়, মঞ্চ থেকে নামতে পারলে বাঁচি।’’

মেদিনীপুরের ফিল্ম সোসাইটি হলে ২৫০-৩০০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। সোসাইটির অন্যতম কর্তা সিদ্ধার্থ সাঁতরা বলেন, ‘‘উদ্যোক্তাদের স্পষ্ট জানানো হয়, হলে বেশি সংখ্যক দর্শক ঢোকানো যাবে না।’’ প্রসঙ্গত, ফিল্ম সোসাইটি হলটি বাতানুকূল নয়। তবে প্রদ্যোত স্মৃতি সদনটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। রেলশহর খড়্গপুরে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রেক্ষাগৃহ নেই। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে নানা টালবাহানার পর পূর্ত দফতরের থেকে দায়িত্ব কেড়ে পুরসভাকে তা নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছেন জেলাশাসক। তবে এখনও সেই কাজও এগোয়নি। শহরে ছোট অনুষ্ঠান করতে অস্থায়ী মঞ্চ কিংবা গোলবাজার দুর্গামন্দিরই ভরসা। বড় অনুষ্ঠানের জন্য অস্থায়ী মুক্ত মঞ্চ গড়া হয়।

Advertisement

শহরের এক বাসিন্দা মনে করাচ্ছেন, ২০১৮ সালে তালবাগিচায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের কথা। সেই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী শান ও সদ্য প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী কে কে। ওই মঞ্চে মশার দাপটে কার্যত অস্থির হয়ে শান বলছিলেন, “গান গাইব কী ভাবে! এ বার তো একেবারে ঘিরে ধরে আমার মুখের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে।” প্রতিবার একই ভাবে অস্থায়ী মুক্তমঞ্চ গড়ে অনুষ্ঠান করতে হয় খড়্গপুর বইমেলা কর্তৃপক্ষকে। সেখানে বেশ কয়েকবার এসেছেন মুম্বই খ্যাত সঙ্গীতশিল্পী কুমার সানু, অভিজিৎ, অলকা ইয়াগনিকের মতো বহু শিল্পী। ২০১৮ সালে অলকা ইয়াগনিকের ওই অনুষ্ঠানে ব্যাপক ভিড় জমেছিল বিদ্যাসাগর আবাসনের প্রাঙ্গণে। যদিও ‘ভিড়’ বিষয়টিকে শিল্পীর জীবনের একটা ‘পাওয়া’ বলে মনে করেন সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। তিনি বলছিলেন, ‘‘ওভার-ক্রাউডেড শো বিষয়টা শিল্পীদের কাছে কোনও বড় ব্যাপার নয়। এটা আমাদের কাছে প্রাপ্তির মতো। আমিও নব্বইয়ের দশক থেকে আজ পর্যন্ত অডিটোরিয়ামের মোট আসন সংখ্যার তিনগুণ দর্শক নিয়ে শো করেছি। মৃত্যু নিশ্চয়ই দুঃখের, কিন্তু দর্শক সংখ্যাটাও শিল্পীর কাছে একটা অ্যাচিভমেন্ট, স্বর্গপ্রাপ্তির মতো। গত ৩০ বছর ধরে আমিও চেয়েছি, ভরা দর্শকের সামনে মঞ্চে গান গাওয়ার সময়ই যেন মৃত্যু আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। কে কে যেন আমার মৃত্যুটা ছোঁ মেরে নিয়ে চলে গেল।’’

অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বছরে ১০০টা অনুষ্ঠানের মধ্যে ৬০টা অনুষ্ঠানই হয় মেদিনীপুরে। কিন্তু মেদিনীপুরে মঞ্চ শুরু হয় অনেক রাতে। রাত যত বাড়ে বিশৃঙ্খলাও বাড়ে। অধিকাংশ জায়গায় গ্রিনরুমের সঙ্গে শৌচাগার থাকে না। মঞ্চের কাছে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাও খুব কম আয়োজকই রাখেন। যত দিন যাচ্ছে দেখছি, দর্শকদের উপর আয়োজকদের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যাচ্ছে।’’

ঝাড়গ্রামে সাংস্কৃতিক মঞ্চ বলতে রয়েছে সেই আদ্দিকালের দেবেন্দ্রমোহন হল ওরফে ডিএম হল। আবার বলাকা হলের অবস্থা এক রকম গুমোট। পুরাতন ঝাড়গ্রামে একটি স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নরসিংহ মঞ্চ তৈরি হয়েছে, কিন্তু তা খুব ছোট আকারে। আবার পুরসভার বাছুরডোবায় যে টাউন হল রয়েছে, সেখানেও যেন দমবদ্ধ অবস্থা। ঝাড়গ্রামের ঝুমুর শিল্পী ইন্দ্রানী মাহাতোর প্রশ্ন বলেন, ‘‘আমরা আর কতদিন শালগাছের নীচে অনুষ্ঠান করব?’’ শহরের এক নৃত্যশিল্পী কোয়েল মিত্র বলেন, ‘‘শহরে বড় মাপের অডিটোরিয়াম বা মঞ্চ তৈরি হলে শিল্পীরা উপকৃত হবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement