দলত্যাগী (বাঁদিক থেকে) যুথিকা মাহাতো, কৃপাসিন্ধু মাহাতো ও ভবতারণ মাহাতোর হাতে 'জয় গরাম লেখা’ সমাজের পতাকা তুলে দিচ্ছেন কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ-এর নেতারা। জামবনির টুলিবড় গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
কুড়মি সামাজিক সংগঠনের ‘মরদ ঢুঁড়া’ কর্মসূচির ডাকে সাড়া দিয়ে দল ছাড়লেন পঞ্চায়েত স্তরের তিন জনপ্রতিনিধি। পদত্যাগীদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের এক উপপ্রধান, বিজেপির এক পঞ্চায়েত সদস্য এবং পঞ্চায়েত সমিতির এক তৃণমূল সদস্য। চলতি মাসের শেষ নাগাদ তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচিতে জেলায় আসার কথা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগে শাসকদলের দুই জনপ্রতিনিধির পদত্যাগে অস্বস্তি শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।
সোমবার জামবনি ব্লকের টুলিবড় গ্রামে কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ) এর নেতৃত্বাধীন ঘাঘর ঘেরা কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের উপস্থিতিতে ওই তিন জনপ্রতিনিধি রাজনীতি ছেড়ে সামাজিক আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তাঁদের হাতে ‘জয় গরাম’ লেখা হলুদ পতাকা তুলে দেন কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)-এর রাজ্য আহ্বায়ক কৌশিক মাহাতো ও সংগঠনের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি বীরেন্দ্রনাথ মাহাতো। এ দিন জামবনি ব্লকের চিল্কিগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান যুথিকা মাহাতো, জামবনি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য ভবতারণ মাহাতো এবং জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য কৃপাসিন্ধু মাহাতো দল ছেড়ে সামাজিক আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
তৃণমূলের ক্ষমতাসীন জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কৃপাসিন্ধুর কথায়, ‘‘বিজেপির প্রতীকে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে নির্বাচিত হওয়ার পরে তৃণমূলে যোগ দিই। কিন্তু কুড়মিদের প্রতি রাজ্য সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম। সরকারকে যথাযোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য সামাজিক আন্দোলনে থাকব।’’ বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য ভবতারণ বলছেন, ‘‘স্বেচ্ছায় দল ছেড়ে সামাজিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছি। কুড়মিদের জাতিসত্তার দাবির আন্দোলনে রাজ্য সরকারকে যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য মাঠে থাকব।’’ একই কথা বলছেন যুথিকাও। যুথিকাও বিজেপি থেকেই পঞ্চায়েতে নির্বাচিত হওয়ার পর তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তবে দল ছাড়ার ঘোষণা করলেও জনপ্রতিনিধির পদ ছাড়বেন কি-না সেটা স্পষ্ট করেননি তাঁরা। বরং সামাজিক সংগঠনের পতাকা হাতে নিয়ে এদিন বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য ভবতারণ এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য সরকারকে উচিত জবাব দেওয়া হবে।’’ তবে কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)এর রাজ্য মুখপাত্র কৌশিক মাহাতো বলছেন, ‘‘আমাদের ‘মরদ ঢুঁড়া’র ডাকে সাড়া দিয়ে স্বেচ্ছায় তিনজন দল ছেড়ে সামাজিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা পঞ্চায়েতের পদ থেকেও ইস্তফা দেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’’
জামবনির বিডিও সৈকত দে জানান, এখনও পর্যন্ত তাঁর কাছে কেউ জনপ্রতিনিধির পদ থেকে ইস্তফাপত্র দেননি। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমার কাছে কেউ দল ছাড়ার চিঠি দেননি। কেউ যদি দল ছাড়ার ঘোষণা করেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।’’ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলছেন, ‘‘আমাদের কাছে কেউ দল ছাড়ার কথা জানাননি। তবে আমাদের দলের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি সামাজিক আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।’’
কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ), আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজ এবং কুড়মি সেনা-র মিলিত ‘ঘাঘর ঘেরা কেন্দ্রীয় কমিটি’ গত মাসের গোড়া থেকে জঙ্গলমহলে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এপ্রিলের শেষসপ্তাহে কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ-এর রাজ্য সভাপতি রাজেশ মাহাতো ‘মরদ ঢুড়া’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শাসকের ‘জয় বাংলা’ কিংবা বিরোধী শিবিরের ‘জয় শ্রীরাম’ নয়, এমনই প্রচার তুলে গ্রামে-গ্রামে শুরু হয়েছে কুড়মি সংগঠনের জনজাগরণ কর্মসূচি। গত ১ মে খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলিতে ঘাঘর ঘেরা কেন্দ্রীয় কমিটির এক প্রকাশ্য সমাবেশে ১২ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেই সব কর্মসূচির অন্যতম ‘মরদ ঢুঁড়া’য় ব্যাখ্যায় বলা হয়, কুড়মি রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী ও জনপ্রতিনিধিদের সমাজের দাবি পূরণে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে, না হলে তাঁদের প্রতি কুড়মি সমাজেরও কোনও দায়দায়িত্ব থাকবে না। যা পরোক্ষে সামাজিক বয়কটেরই ইঙ্গিত। সমাজের দাবিকে অবহেলা করে কোনও কুড়মি যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাহলে তাঁকে কোনও ভাবেই সমর্থন করা হবে না। কোনও কুড়মি গ্রামে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা প্রচারে গেলে তাঁদের ঘাঘর ঘেরা করে কুড়মিদের দাবি পূরণের জন্য তাঁরা কী-কী করেছেন সেই জবাব চাওয়া হবে। কুড়মিদের দেওয়ালে কোনও রকম রাজনৈতিক লেখা নিষিদ্ধ। কুড়মি শিল্পীরা কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে শামিল হবেন না। কোনও রাজনৈতিক দলের সভা-মিছিলে কুড়মিদের কেউ যোগ দেবেন না।