নোটের জালে আটকে সরকারি ধানের শিবির

প্রতি বছর শীতের সময় আমন ধান বিক্রি করে বোরো ধান চাষের জন্য টাকা জোগাড় করেন নন্দকুমারের চাষি অভিরাম মাইতি। কিন্তু এ বছর ধান বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে নোট বাতিলের গেরোয়। কারণ নোট বদল বা পুরনো টাকা লেনদেন বন্ধের জন্য সমিতিগুলিকে নির্দেশিকা দেওয়ায় গ্রামীণ সমবায় সমিতিগুলির এখন নাভিশ্বাস দশা।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৩৩
Share:

প্রতি বছর শীতের সময় আমন ধান বিক্রি করে বোরো ধান চাষের জন্য টাকা জোগাড় করেন নন্দকুমারের চাষি অভিরাম মাইতি। কিন্তু এ বছর ধান বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে নোট বাতিলের গেরোয়। কারণ নোট বদল বা পুরনো টাকা লেনদেন বন্ধের জন্য সমিতিগুলিকে নির্দেশিকা দেওয়ায় গ্রামীণ সমবায় সমিতিগুলির এখন নাভিশ্বাস দশা। অথচ সরকারি মূল্যে চাষিদের থেকে ধান কেনার জন্য শিবির করে সমবায় সমিতিগুলিই।

Advertisement

কিন্তু এ বছর টাকার সমস্যায় কৃষকদের ধান কেনা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফলে সমবায় সমিতিগুলির পাশাপাশি ধান বিক্রি করা নিয়ে চরম সঙ্কটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কৃষকরাও। সমস্যার কথা স্বীকার করে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা খাদ্য নিয়ামক সুনয় গোস্বামী বলেন, ‘পুরনো নোট বদল নিয়ে সমবায় সমিতিগুলির লেনদেনে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞার জেরে ধান কেনার শিবির আয়োজন নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার শিবির আয়োজন করতে প্রস্তুতি চলছে।’’

জেলা খাদ্য দফতর ও সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বোরো ধান চাষ-সহ নিজেদের নানা প্রয়োজনে টাকা জোগাড় করতে প্রতি বছর শীতের সময় বহু চাষি নতুন তোলা আমন ধান বিক্রি করেন। অনেকেই আগে রেখে দেওয়া ধান এ সময় বাজারে বিক্রি করেন। টাকার অভাব মেটাতে এ সময় কৃষকরা ফড়েদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন বলে অভিযোগ। কৃষকদের ধানের এই অভাবি বিক্রি রুখতে সরকারিভাবে নির্ধারিত মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য উদ্যোগ নেয় খাদ্য দফতর। প্রতি বছর শীতে আমন ধান তোলার সময় থেকে বিভিন্ন রাইস মিলের মাধ্যমে এবং গ্রামীণ সমবায় সমিতিগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য শিবির করা হয়। ধান কেনার জন্য প্রাথমিকভাবে সমবায় সমিতি নিজস্ব তহবিল খরচ করে থাকে। পরবর্তী সময় কেন্দ্রীয় সমবায়ের মাধ্যমে খাদ্য দফতরের বরাদ্দ অর্থ পায়।

Advertisement

কিন্তু এ বার নোট বদলের গেরোয় ধান কেনার জন্য চাহিদামত টাকা জোগাড় করতে না পারায় গ্রামীণ সমবায় সমিতিগুলি ধান কেনার শিবির করতে সমস্যায় পড়েছে। জেলার নন্দকুমার ব্লকের সাওড়াবেড়িয়া জালপাই উত্তরপল্লী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি রিপুঞ্জয় প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমাদের সমবায় সমিতির সঙ্গে ১৫ টি গ্রামের বাসিন্দারা যুক্ত রয়েছেন। গত বছর আমাদের সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে চাষিদের কাছ থেকে সরকারি দামে ধান কেনার জন্য এলাকায় মোট ১৫ টি শিবির করা হয়েছিল। ধান কেনার ওই শিবির আয়োজন করতে প্রাথমিকভাবে সদস্যদের আমানতের কয়েক লক্ষ টাকা ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু এ বার আমানত সংগ্রহে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।’’

কোলাঘাট ব্লকের ক্ষেত্রহাট সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি চিত্তরঞ্জন বেরা বলেন, ‘‘আমাদের সমিতির সঙ্গে এলাকার ৮ টি গ্রামের বাসিন্দারা যুক্ত। গত বছর ধান কেনার জন্য আমানতের প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছিলাম। কিন্তু এবার নোট বাতিল নিয়ে নির্দেশিকার জেরে সমিতির লেনদেন প্রায় বন্ধ।’’ সমস্যার কথা স্বীকার করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ বিমান পন্ডা বলেন , ‘‘চলতি বছরে চাষিদের কাছে ধান কেনার জন্য সরকারি সহায়ক ধার্য হয়েছে ১৪৭০ টাকা। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পর নির্দেশিকার কারণে গ্রামীণ সমবায় সমিতিগুলি টাকার সমস্যার কথা জানিয়েছে। তবে ধান কেনার জন্য বিকল্পভাবে অর্থ সংস্থানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement