ঘাতক গাড়িতে ভাঙচুর চালান স্থানীয় বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।
পুলিশের তাড়া খেয়ে পালানোর সময় রাস্তার পাশে বাবা মায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিশুকে পিষে মারল পশুবোঝাই একটি গাড়ি। এ নিয়ে চাঞ্চল্য পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা থানার আলংগিরি এলাকায়। ঘাতক গাড়িতে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয়েরা। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটের ঘায়ে আহত হন একাধিক পুলিশকর্মী। পাল্টা পুলিশের লাঠিচার্জে জখম হন বেশ কয়েক জন।
মৃত শিশুর নাম রাজদীপ ঘোড়াই (৭)। রাখিপূর্ণিমা উপলক্ষে বাবা ও মায়ের সঙ্গে মামার বাড়িতে যাচ্ছিল শিশুটি। রাস্তার পাশে একটি মিষ্টির দোকানে দাঁড়িয়েছিল সে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ছাগলবোঝাই একটি গাড়িকে তাড়া করছিল পুলিশের একটি গাড়ি। তখন পশুবোঝাই গাড়িটি আচমকাই গতি বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুটিকে পিষে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা ধাওয়া করে গাড়িটিকে ধরে ফেলেন। চালককে মারধর করা হয়। ভাঙচুর চালানো হয় গাড়িটিতে। তার মধ্যে পুলিশের গাড়ি পৌঁছে যায়। তখন বিক্ষোভ শুরু হয় পুলিশের বিরুদ্ধে।
খবর পেয়ে এগরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বিতণ্ডা শুরু হয়। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ অবরোধ তুলতে গিয়ে লাঠিচার্জ করে। সেই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দিকে ইট-পাটকেলও ছুড়েছে। তাতে বেশ কয়েক জন পুরুষ এবং মহিলা জখম হয়েছেন। অন্য দিকে, পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা তাদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে। তার ঘায়ে একাধিক পুলিশকর্মী জখম হন। ইতিমধ্যে গাড়িচালককে আটক করেছে পুলিশ।
আলংগির গ্রামের বাসিন্দা এবং ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দেবাশিস পণ্ডা বলেন, “বেলা ২টো নাগাদ শিশুটি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময় ছাগলবোঝাই একটি গাড়ি শিশুটিকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমরা তাড়া করে গাড়িটিকে আটকে দিই। চালককে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিই। সেই সময় জানতে পারি, ওই গাড়িটি পুলিশের তাড়া খেয়েই পালাচ্ছিল। তাতেই সবাই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সেই সময়ই বিভিন্ন এলাকা থেকে মহিলারা এসে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। অবরোধ তুলতে গিয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ইটও ছোড়ে।’’ এ নিয়ে এগরার বিধায়ক তরুণকুমার মাইতি বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। পিক-আপ ভ্যান বেপরোয়া গতিতে চলার জেরেই এই দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাস্তা অবরোধের পাশাপাশি আইন হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন কয়েক জন। খবর নিয়ে জেনেছি, ঘাতক গাড়িটির পাশাপাশি চালককেও পুলিশ আটক করেছে। সেই সঙ্গে মৃত শিশুর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।” তিনি জানান, জনবহুল ওই এলাকায় ট্র্যাফিক ব্যবস্থার উপর নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। প্রশাসন গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখছে।