ঢুকছে পর্যটকদের গাড়ি। মন্দারমণিতে রোজ ভ্যালির হোটেলে সোহম গুহর তোলা ছবি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পেল্লাই এই হোটেলটা ঘিরে স্থানীয়দের উত্সাহ ছিল চোখে পড়ার মতো । বুধবার রাতে এই হোটেলের সামনেই মানুষের জটলা ঘিরে কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। তবে ফের এ দিন সকালে মন্দামণির রোজ ভ্যালির প্রাসাদোপম হোটেল কিন্তু রইল তার পুরনো ছন্দেই।
টানা ছ’ঘণ্টা জেরার পর বুধবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার হন রোজ ভ্যালি লগ্নি সংস্থার কর্তা গৌতম কুণ্ডু। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রেফতারের কথা জানাজানি হতেই রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ রোজ ভ্যালির মন্দারমণির হোটেলের সামনে হাজির হন স্থানীয় কালিন্দী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শ’দুয়েক বাসিন্দা। গতকাল জড়ো হওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, রাতে তিনটি ট্রাক্টর হোটেলে ঢুকেছিল। ফলে আমানতকারীদের ধারণা হয়, রোজ ভ্যালি কর্তৃপক্ষ হোটেল থেকে দামি জিনিস সরাতে ট্রাক্টর পাঠিয়েছে। তবে বিক্ষ্ুব্ধদের কেউই রাতে হোটেলে ঢোকেননি বা ভাঙচুরের চেষ্টাও করেননি। এই হোটেলের পাশের এক হোটেল মালিক শেখ কিব্রিয়াউদ্দিনও ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, “হোটেলের সামনে জটলা দেখেই আমরা মন্দারমণির পুলিশ ক্যাম্প ও রামনদর থানায় খবর দিয়েছিলাম।” খবর পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে হাজির হয় রামনগর থানার পুলিশ।
২০০৭ সালে রোজ ভ্যালির রমরমার সময় শুরু হয় এই হোটেল। মন্দারমণির সৈকতে এ ভাবে হোটেল তৈরি নিয়ে প্রথম দিকে নানা আপত্তিও জানিয়েছিল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সে নিয়ে মামলাও চলছে। তবে সারদা কাণ্ডের পর ২০১৩ সাল নাগাদ হোটেলের নাম থেকে বাদ যায় রোজ ভ্যালি নামটি। হোটেলের নাম হয় সান সিটি। আর এই হোটেলটিকে রোজ ভ্যালির একটি ইউনিট হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এমনকী রোজ ভ্যালির লোগোও বাদ যায় হোটেলের বোর্ড থেকে। বারবার বিতর্ক হলেও বরাবরই এই হোটেল ঘিরে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ছিল নজরকাড়া। প্রায় ১১০ বিঘা জমির উপর হোটেলে রয়েছে আমোদ-প্রমোদের এলাহি আয়োজন। হোটেল চত্ত্বরে রয়েছে রোপওয়ে, সুইমিং পুল, ওয়াটার পার্ক-এমনই নানা কিছু। এছাড়া সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের জন্য প্যারাসেলিং, স্পিড জেটের ব্যবস্থাও রয়েছে।
বুধবারের ওই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কিন্তু চেনা ছন্দে রয়েছে মন্দারমনি। হোটেলের ম্যানেজার প্রশান্ত বিশ্বাস জানিয়েছেন, বুধবার রাতে হোটেলের ১১৭টি রুমের মধ্যে ৮০টি রুমে পযর্টকরা ছিলেন। বৃহস্পতিবার ৪৫ জন পর্যটক চেক আউট ও ৪৬ জন পর্যটক চেক ইন করেছেন। বুধবারের ঘটনায় হোটেলের বোর্ডারদের সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পর্যটকের কথায়, “বুধবার রাতে আমরা কিছুই টের পাইনি। এখনও পরিষেবা পেতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।”
শুধু মন্দারমণিতেই নয়, কাঁথি শহরেও রোজ ভ্যালির অফিসে কাজকর্ম চলেছে স্বাভাবিকভাবেই। কাঁথি শাখার আধিকারিক সুজয় পণ্ডা জানিয়েছেন, আমানতকারীদের বিক্ষোভ তো দূর এ দিন অনেক আমানতকারী অফিসে টাকাও জমা দিয়েছেন। কাঁথি থানার পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় যাতে কোনও ঝামেলা না হয়, তার জন্য নজরদারি চালানো হচ্ছে।