বালি বোঝাই ট্রাক্টরের দাপটে রাস্তার দফারফা। নিজস্ব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনায় পিচ রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল তিন বছর আগে। কিন্তু অভিযোগ, ঠিকাদার সংস্থার গড়িমসির কারণে কাজ বিশেষ এগোয়নি। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পেরে পাততাড়ি গুটিয়েছে ঠিকাদারি সংস্থাটি। এই পরিস্থিতিতে ঝাড়গ্রাম ব্লকের চুবকা গ্রাম পঞ্চায়েতের মেউদিপুর-ভিড়িংপুর চার কিলোমিটার রাস্তাটি এলাকাবাসীর নিত্য যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় রাংড়াকোলা, ভিড়িংপুর, আমদই, রাউতারাপুর, পাকুড়িয়াপাল, মেউদিপুর, খালশিউলি গ্রামের প্রায় সাত-আট হাজার বাসিন্দার যাতায়াতের এটি প্রধান রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে মেউদিপুর চক হয়ে ঝাড়গ্রাম ও খড়্গপুর যাওয়া যায়। আবার মেউদিপুর চক থেকে এই রাস্তা ধরে আমদই গেলে কংসাবতীর কনকাবতী ঘাটে বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে শর্টকাটে মেদিনীপুর যাওয়া যায়। বেহাল রাস্তাটির কাজ শেষ করার দাবিতে বহুবার প্রশাসনিক মহলে আবেদন জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বার কয়েক পথ অবরোধও হয়েছে। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
২০১২ সালে মেউদিপুর-ভিড়িংপুর চার কিলোমিটার রাস্তাটি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় পিচ করার জন্য ২ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে রাস্তায় মাটি ফেলে চওড়া করার কাজ শুরু হয়। কিন্তু ঠিকাদার সংস্থাটি আরও অন্য এলাকায় অনেকগুলি রাস্তার কাজ ধরায় এই রাস্তাটির কাজে গড়িমসি করতে থাকে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে কংসাবতীর আমদই ঘাটে একাধিক বেআইনি বালি খাদান গজিয়ে উঠেছে। ওই সব বেআইনি খাদানের বালি নিয়ে লরি ও ট্যাক্টর গুলি আমদই থেকে মেউদিপুর ও পাঁচরুলিয়া হয়ে খড়্গপুরের দিকে চলে যায়। প্রতিদিন কয়েকশো বেআইনি বালি বোঝাই ট্যাক্টর ও লরি চলাচলের ফলে রাস্তাটির দফারফা অবস্থা হয়ে গিয়েছে।
২০১৫-র গোড়ায় এলাকাবাসীর বিক্ষোভের জেরে ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে বোল্ডার ও মোরাম দিয়ে রাস্তাটির সংস্কার করা হয়। গত বছর নভেম্বরে রাস্তার কাজ শেষ করার দাবিতে মেউদিপুর চকে টানা ১২ ঘন্টা পথ অবরোধ করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই সময় প্রশাসনিক কর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ করে ফেলা হবে। তারপর বছর গড়িয়ে গেলেও রাস্তাটির কাজ শুরুই হয়নি।
মেউদিপুর চকে রাস্তার ধারে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার বোর্ডে লেখা রয়েছে ২০১৩-র ২১ জানুয়ারি রাস্তাটি তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০১৪-র ২০ জানুয়ারির মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা ছিল। টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী বোর্ডে লেখা আছে, ২০১৪-র ২১ জানুয়ারি থেকে ২০১৯-র ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদারি সংস্থাটি রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করবে। স্থানীয় বাসিন্দা হরিপদ মাহাতো, ত্রিলোচন বেরা-দের বক্তব্য, “জঙ্গলমহলে এত উন্নয়ন কাজ হচ্ছে, অথচ তিন বছরেও আমরা পিচের রাস্তা পেলাম না।”
চুবকা পঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপ সোম বলেন, “রাস্তার কাজটি শেষ করার জন্য বার বার জেলা পরিষদকে জানাচ্ছি।” দিলীপবাবুর অবশ্য দাবি, “কিছুদিন গোপনে বেআইনি বালি গাড়ি চলাচল করছিল। পুলিশের অভিযানের ফলে এখন আর এই রাস্তায় বালি গাড়ি চলছে না।” যদিও এলাকায় গিয়ে অন্য ছবি ধরা পড়েছে আনন্দবাজারের ক্যামেরায়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি বলেন, “ঠিকাদার সংস্থাটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজটি করতে পারেনি। অন্য ঠিকাদার সংস্থা ওই কাজটি করতে চাইছে না। বিষয়টি রাজ্যস্তরের বৈঠকে জানিয়েছি।”