পুরো সংস্কার দূর, সিংহভাগ কাজই বাকি

কেলেঘাই, কপালেশ্বরী, বাগুই, চণ্ডীয়া আর দেউলি-এই পাঁচটি নদীর জলে বহুবার প্লাবিত হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর, পটাশপুর, ময়না ব্লক ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন, নারায়ণগড়, সবং ও পিংলা-এই সাতটি ব্লক। বানভাসি হয়েছেন এই এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। সমস্যা থেকে এলাকার বাসিন্দাদের রেহাই দিতে ২০১১-১২ সালে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই নদী সংস্কার প্রকল্প মঞ্জুর করা হয়। ২০১৪ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। ২০১৪ শেষ হতে বাকি আর টেনেটুনে তিন মাস। কিন্তু কাজ শেষ হওয়া তো দূর, এখনও প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ রয়ে গিয়েছে বাকি।

Advertisement

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫৩
Share:

পটাশপুরের বড়বড়িয়া এলাকায় থমকে কেলেঘাই নদীর খাল সংস্কার। --ফাইল চিত্র

কেলেঘাই, কপালেশ্বরী, বাগুই, চণ্ডীয়া আর দেউলি-এই পাঁচটি নদীর জলে বহুবার প্লাবিত হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর, পটাশপুর, ময়না ব্লক ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন, নারায়ণগড়, সবং ও পিংলা-এই সাতটি ব্লক। বানভাসি হয়েছেন এই এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। সমস্যা থেকে এলাকার বাসিন্দাদের রেহাই দিতে ২০১১-১২ সালে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই নদী সংস্কার প্রকল্প মঞ্জুর করা হয়। ২০১৪ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। ২০১৪ শেষ হতে বাকি আর টেনেটুনে তিন মাস। কিন্তু কাজ শেষ হওয়া তো দূর, এখনও প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ রয়ে গিয়েছে বাকি।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১২-র ১৭ ফেব্রুয়ারি ভগবানপুরের লাঙলকাটায় রাজ্যের তৎকালীন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া এই কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। হাজির ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী পবন বনশল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় মানসবাবু ঘোষণা করেছিলেন ২০১৪ সালের মধ্যে মোট ৩টি পর্যায়ে কেলেঘাই, কপালেশ্বরী, বাঘাই, চণ্ডীয়া ও দেউলি এই পাঁচটি নদী ও নদী সংশ্লিষ্ট ৩২টি খাল সংস্কার শেষ করা হবে। ৬৫০.৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০৬.০০৭ কিলোমিটার। কিন্তু সেচ দফতর সূত্রে খবর, এখনও সংস্কারের কাজ হয়েছে ২১৩ কিলোমিটার। দেউলি নদী সংস্কারের কাজ শুরুই করা হয়নি। অন্য দিকে পাঁচটি নদী সংশ্লিষ্ট ৩২টি শাখা খাল সংস্কারের জন্য ১৬৫.০২২ কিলোমিটার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সংস্কার করা হয়েছে ১৬১ কিলোমিটার। সেচ দফতরের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার অনীশ ঘোষ বলেন, “প্রকল্পে পাঁচটি নদী ও ৩২টি খাল মিলিয়ে ২১৩ কিলোমিটার সংস্কারের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। খরচ হয়েছে ১৭২.৪৫৪ কোটি টাকা। কাজ হয়েছে বলেই বন্যা কবলিত এলাকা বলে চিহ্নিত সাতটি ব্লকের বাসিন্দাদের বন্যার কবলে পড়তে হয়নি।”

২০১৪ সালের মধ্যে তো কাজ শেষ হওয়ার কথা। বছর শেষ হতে বাকি আর তিন মাস। অথচ প্রথম পযার্য়ের কাজ কিছুটা হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় পযার্য়ের কাজ শুরুই করা হয়নি বলে অভিযোগ। মেদিনীপুর জেলা বন্যা-ভাঙন-খরা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে স্থায়ী বন্যারোধে প্রকল্পের বাকি কাজ দ্রুত শেষের দাবিতে সম্প্রতি রাজ্যের রাজ্যপাল ও সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত নেতা নারায়ন চন্দ্র নায়কের অভিযোগ, “মূলত জমি অধিগ্রহণ না হওয়ার ফলেই এই কাজ থমকে গেছে বলে আমরা দফতর সূত্রে জানতে পেরেছি।” বিধায়ক ও প্রাক্তন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “বর্তমান সেচমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসনিক আধিকারিকদের কোনও সক্রিয় উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।”

Advertisement

তবে সেচ দফতরের দাবি, বর্ষার কারণে খননকাজ বন্ধ রয়েছে। বর্ষার মরসুম মিটলেই ফের কাজ শুরু হবে। অনীশবাবু জানিয়েছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৪-১৫ সালে আরও ৫০ কিলোমিটার খাল সংস্কারের জন্য সেচ দফতর থেকে ওয়ার্ক-অর্ডার দেওয়া হয়েছে। সেই কাজ শেষ হবে কবে? এ বিষয়ে উত্তর দেন নি অনীশবাবু। তবে দ্বিতীয় বর্ষের কাজের ওয়াকর্-অর্ডার জারির সময় সীমা ২০১৪-১৫ বর্ষ হওয়ায় বোঝাই যাচ্ছে প্রকল্পের কাজ শেষ সুদূর প্রসারী বিষয়।

দুই মেদিনীপুর জেলার বন্যা কবলিত ১২টি ব্লকের জন্য ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ১৯৮২ সালে বামফ্রন্ট সরকারের তৎকালীন সেচমন্ত্রী প্রভাস রায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এমনকী নতুন করে রাজ্য সরকারের তরফে মাস্টার প্ল্যানের বিস্তারিত প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করা হয়। কন্তু সেই রিপোর্ট পেশের পরও গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশনের পক্ষ থেকে কোনও অনুমোদন মেলেনি। এখন প্রকল্প ব্যয়ের খাতে কেন্দ্র ও রাজ্য কে কত শতাংশ টাকা দেবে তা নিয়েও শুরু হয়েছে কাজিয়া। ফলে প্রকল্পটি আদৌ ছাড়পত্র পাবে কি না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সন্দেহ।

সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “দুটি প্রকল্পই বাস্তবায়িত করতে গিয়ে কিছু সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে সেচ দফতরকে। কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পে প্রথমে তিনটি নদী থাকলেও পরে দুটি নদী প্রকল্পের মধ্যে ঢুকেছে। প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ একটা সমস্যা। যে সব জায়গায় জমি জট নেই সেই জায়গায় দ্রুত কাজ করে প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।” ২০১৫ সালের মধ্যে কাজ শেষে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। আর ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কেন্দ্রীয় অনুমোদন এখনও পাওয়া যায়নি। বতর্মান পরিস্থিতিতে কয়েকটা পর্যায়ে সেচ দফতর কাজটি ভাগ করে কাজ শুরু করতে চলেছে। প্রথম পর্যায়ে ঘাটাল থেকে পাঁশকুড়া পযর্ন্ত সংস্কার করা হবে। পরে ধাপে ধাপে বাকি কাজ করা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement