সংস্কার: বাঁধের কাজ চলছে দাসপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
একদিকে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া একাধিক নদীবাঁধ। যার ফলে নদীর জল বাড়লে বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়ে পড়ে বহু এলাকা। উল্টোদিকে, বাঁধ সারানো হচ্ছে বলে সেচ দফতরের দাবি। দু’য়ের মাঝে বস্তুত জলে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। যা কপালে ভাঁজ ফেলেছে ঘাটালবাসীর।
সেচ দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সেচ দফতরের জমি দখলের পাশপাশি নদীবাঁধের উপর তৈরি হচ্ছে বড় বড় দোকান এমনকী ঘর-বাড়িও। নদীর পাড়েই ইমারতির সরঞ্জাম ফেলে চলছে দেদার ব্যবসা। তার উপর যান চলাচল তো আছেই। ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে বাঁধ। মহকুমার শিলাবতী, পুরনো কাঁসাই, রূপনারায়ণ প্রভৃতি নদীগুলিতে মোট ১৫৩ কিলোমিটার নদীবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ঘাটাল এবং দাসপুর-১ ও ২ ব্লকের প্রায় ৭০ কিলোমিটার নদীবাঁধের উপর বাস, ট্রেকার-অটো চলাচল করে। ইদানীং ভারী যান চলাচলও করায় পাড় বসে যাচ্ছে। যদিও সেচ দফতরের দাবি, নদীবাঁধে ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এর জন্য মাইকে প্রচারও শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘাটাল মহকুমা একটি কড়াইয়ের মতো। অল্প বৃষ্টিতেই আশপাশের এলাকার জল এখানে এসে জমা হয়। শিলাবতী, কংসাবতী, ঝুমি, কেঠে সহ নদীগুলির কোনও সংস্কার হয় না। ফলে দু’দিনের বৃষ্টিতেই নদীর পাড় উপছে জলমগ্ন হয়ে পড়ে মহকুমার সিংহভাগ এলাকা। তার উপর নদীবাঁধগুলিও দুর্বল হয়ে পড়ায় বর্ষার মরসুমে চিন্তা বেড়েছে ঘাটালবাসীর। ২০০৭ সালে রূপনারায়ণ নদের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল গোটা মহকুমা। গত বছরও চন্দ্রকোনার যদুপুরে শিলাবতী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল বহু এলাকা।
ঘাটালে বন্যা পরিদর্শনে এসে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্বদেব ভট্টাচার্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মহকুমার সমস্ত নদীবাঁধের সংস্কার করা হবে। বতর্মান সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও একাধিক বার ঘাটালে এসে একই আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি মতো রাজ আর হয়নি। এমনটাই বলছেন এখানকার মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষার আগে টুকটাক সংস্কার করেই বাঁধ সারানোর দায় সেরে ফেলে সেচ দফতর। ফলে সমস্যার পুরোপুরি সমাধান আজও হয়নি। মহকুমা সেচ আধিকারিক উত্তম হাজরার অবশ্য দাবি, “দুর্বল নদীবাঁধগুলিকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করে সংস্কার শুরু হয়েছে।”
এদিকে বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের ঠান্ডা লড়াইয়ে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানও অথৈ জলে। মহকুমার খরা-বন্যা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে নারায়ণ নায়েক বলেন, “মাস্টার প্ল্যানের অজুহাত দিয়ে নদীর পাড়গুলিও সংস্কার করেনি সেচ দফতর। ফলে নদীতে জলের চাপ বাড়লেই বন্যার আশঙ্কায় দিন গুনতে হয় এখানকার মানুষকে।” কমিটির তরফে অবিলম্বে নদীবাঁধগুলির পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘাটাল মহকুমার একাধিক নদীবাঁধ সংস্কারে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কাজওশুরু হয়েছে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তাবায়িত করতেও জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”