মধুমিতা বাগের ।
গাড়ির ধাক্কায় ছাত্রী মৃত্যুর ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তবে মহিষাদলের এই ঘটনায় ইভটিজিংয়ের তত্ত্বকে খারিজ করে দিয়েছে পুলিশ। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য রুজু হয়েছে খুন ও খুনের চেষ্টার মামলা। শুক্রবার ওই গাড়ির চালক সুব্রত মাইতি এবং মালিক দিব্যেন্দু দাসকে গ্রেফতার করে হলদিয়া মহকুমা আদালতে তোলা হয়। পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় বিচারক ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সম্পর্কে মাসতুতো ভাই ধৃত দুই যুবক হলদিয়ার ভবানীপুরের বাসিন্দা।
কিন্তু খুনের মামলা রুজুর পরেও কেন ধৃতদের পুলিশ নিজের হেফাজতে নিল না?
পুলিশ সূত্রে দাবি, ধৃতদের কাছ থেকে যা জানার, জানা হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার পরেই রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ জানিয়েছিলেন, এখন থেকে এমন ঘটনায় খুনের মামলা দায়ের করা হবে। মহিষাদলের ঘটনার প্রেক্ষিতে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এ দিন বলেন, ‘‘ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের ও খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত চলছে। গাড়িতে যান্ত্রিক কোনও ত্রুটি হয়েছিল কিনা তা-ও পরীক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মধুমিতা বাগের মা।— ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটে নাগাদ মহিষাদলের গাড়ুঘাটায় ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পড়তে যাচ্ছিল একাদশ শ্রেণির তিন ছাত্রী মধুমিতা বাগ, তার খুড়তুতো বোন সুমিতা ও বন্ধু পিঙ্কি নায়েক। তখনই বেপরোয়া ওই গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে পড়ে মৃত্যু হয় মধুমিতার। স্থানীয়রাই গাড়ির চালক সুব্রত মাইতিকে আটক করেন। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। গাড়ির মালিক দিব্যেন্দু দাসও গাড়িতেই ছিলেন। তিনি অবশ্য ঘটনার পরে জখম তরুণীদের উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। মধুমিতার জেঠতুতো দাদা লক্ষ্মণ বাগ এ দিন বলেন, ‘‘খবর পেয়েই আমরা যাই। ওই গাড়ির এক সওয়ারি উদ্ধারকাজে সাহায্য করেন। তিনি আমাদের সঙ্গে তমলুক জেলা হাসপাতাল পর্যন্তও গিয়েছিলেন।’’
মধুমিতার মৃত্যুর পরে বৃহস্পতিবার এলাকায় রটে গিয়েছিল, ইভটিজিং করতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে গাড়ির চালক। তবে মৃত ছাত্রীর পরিবারের তরফে এমন কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। এ দিনও তমলুক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল সুমিতা ও পিঙ্কি। দু’জনেরই পায়ে চোট রয়েছে। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে পুলিশ গিয়ে জখম দুই তরুণীর বয়ান রেকর্ড করেছে। হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “জখম দুই ছাত্রী জানিয়েছে ওই দিন ইভটিজিংয়ের কোনও ঘটনা ঘটেনি। বয়ান ডিজি-র কাছে পাঠানো হয়েছে।’’ জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে নন্দকুমারের মাধবপুর গ্রামে বাড়ি ওই তিন ছাত্রীর বাড়ি। শুক্রবার সকালে নিহত মধুমিতা বাগের বাড়িতে ভিড় করে এসেছিলেন প্রতিবেশীরা। বাবা গুরুপদ বাগ ও মা গৌরীদেবী শোকে পাথর। কৃষক গুরুপদবাবুর দুই মেয়ে এবং এক ছেলের মধ্যে বড় মধুমিতা তাজপুর হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। গুরুপদবাবু বলেন, ‘‘আমার মেয়ে, ভাইঝি তো রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তারপরেও এমন ঘটনা ঘটল কী করে? আমি দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই।’’
পুলিশ অবশ্য, ঘটনা তেমন নয় বলেই দাবি করেছে। এমনকী হাসপাতালে সে কথা জানিয়েছে সুমিতাও। তবে স্থানীয় বাসিন্দা নন্দদুলাল বাগের অভিযোগ, ‘‘জাতীয় সড়কে প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি চালানো হয়। অনেকে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালান। প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ দরকার।’’