জবার মালা পরে প্রচারে
মন্দ্রিত মিছিলে হাঁটছেন সিপিএমের পোড় খাওয়া-নেতা কর্মীরা। মধ্যমণি নয়াগ্রাম বিধানসভার সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কে। মিছিলে বেশ কিছু মহিলাও হাঁটছেন প্রার্থীর সমর্থনে। বুধবার সকালে ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন সাংসদ পুলিনবিহারীবাবুর গলায় লাল জবার মালা দেখে চমকে উঠলেন গোপীবল্লভপুর বাজারের পথচলতি জনতা। শুরু হল গুঞ্জন। দলের এক কর্মী জানালেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের পরে জোরদার নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে। এ দিন সাংগঠনিক বৈঠক করতে গোপীবল্লভপুরে এসেছিলেন পুলিনবাবু। প্রার্থীকে কাছে পেয়ে মিছিল করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি কর্মীরা। লাল জবার মালা দিয়েই বরণ করা হয় পুলিনবিহারীবাবুকে। পথচলতি এক প্রবীণের সরস মন্তব্য, “ভোটের বাজারে লাল জবার মালাটা কী প্রার্থীর স্টাইল-স্টেটমেন্ট!” পুলিনবাবু বলছেন, ‘‘কর্মীরা লালফুলের মালাটা পরিয়েছিলেন। ফুলটা জবা কি-না খেয়াল করিনি।”
আছেন ধর্মেও
হিন্দুদের কাছে তিনি শিব। আদিবাসীদের কাছে টাঁড়বারো। নয়াগ্রামের জঙ্গলে অবশ্য তিনি লৌকিক দেবতা কালুয়াষাঁড়। মঙ্গলবার সেই কালুয়াষাঁড়ের থানে ১০৮ টি নারকেল ফাটিয়ে পুজো দিলেন নয়াগ্রামের বিধায়ক তথা নয়াগ্রাম বিধানসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী দুলাল মুর্মু। প্রচারের ফাঁকে দেবদেবীর উদ্দেশ্যে পুজো-পাঠও চলাচ্ছেন সমানতালে। সোমবার নয়াগ্রামের রামেশ্বর মন্দির প্রাঙ্গণে শিবচতুর্দ্দশীর মেলাতেও হাজির ছিলেন দুলালবাবু। তাঁর কথায়, “এবার যাতে আরও বেশি ভোটে জিততে পারি সেজন্য বাবার কাছে প্রার্থনা করলাম। অনুগামীদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে সিপিএম ও বিজেপি। তাই, জনসংযোগের জন্য দাদার ভক্তিও বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ! দাদা যে ধর্মেও আছেন, জিরাফেও।
ঘর ঘর কা
একজন বিধায়ক, একজন ব্লক সভাপতি। একই বাজার এলাকায় তাঁদের আলাদা আলাদা অফিসে চলে তৃণমূলের কাজ। কেউ কারও অফিসে পা রাখেন না। তাতে কি? ভোট বড় বালাই। চণ্ডীপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রার্থী অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য ও দলের ব্লক সভাপতি অশ্বিনী দাস আপাতত ব্যস্ত মেলাতে মিলিতে। চণ্ডীপুর বাজারে তাই ভাড়া করা হয়েছে দু’কামরার আলাদা বাড়ি। সেখানেই বসবে নির্বাচনী কার্যালয়। যাতে একে অপরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতে আর কোনও বাধা না-থাকে।
যোগ সিপিএমে
বিজেপির অঞ্চল সহ সভাপতি কার্তিক চন্দ্র নন্দীর নেতৃত্বে ৭০জন বিজেপি কর্মী ও সমর্থক বিজেপি ছেড়ে সিপিএমে যোগ দিলেন। বুধবার রামনগরের বাধিয়াতে সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহের উপস্থিতিতে কার্তিকবাবুর নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীরা সিপিএমে যোগ দেন। তাঁদের হাতে সিপিএমের দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে সিপিএমে স্বাগত জানান তাপসবাবু।
সেলের চা!
বুধবারের দুপুর। মেদিনীপুর কালেক্টরেট চত্বরে এক চা- বিক্রেতা হাতে কেটলি নিয়ে ঘুরছেন। এক হাতে কেটলি। অন্য হাতে প্লাস্টিকের কাপ। এক অফিস থেকে অন্য অফিসে যাচ্ছেন। এক অতিরিক্ত জেলাশাসকের দফতরের সামনে ছিলেন কয়েকজন কর্মচারী এবং নিরাপত্তারক্ষী। চা- বিক্রেতা তাঁদের সকলকে এক কাপ করে চা দিলেন। দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলেন অন্য এক যুবক। কাজ হাতে নিয়ে তিনি কালেক্টরেটে এসেছেন। চা- বিক্রেতাকে যুবকটি বললেন, ‘দাদা, এক কাপ চা হবে?’ চা- বিক্রেতার জবাব, “দাদা, এটা সাধারণ চা নয়, সেলের চা!’ শুনে থ ওই যুবক। এখন মেদিনীপুরে চৈত্র সেল শুরু হয়ে গিয়েছে। তা বলে চা- ও সেলে! যুবকের ভুল ভাঙলেন এক নিরাপত্তারক্ষী। তিনি বললেন, “এত ভাবার কিছু নেই! সামনে নির্বাচন। মেদিনীপুরেও নির্বাচনী সেল তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন অফিসারদের মধ্যে নির্বাচনের বিভিন্ন কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এখন সব অফিসেই দু’- তিনবার করে চা আসে। চায়ের বিল নির্বাচনী সেল মেটায়। তাই চা- বিক্রেতা সেলের চা বলেছেন!” মুচকি হেসে যুবকটি বললেন, “তাই বলুন! আমি ভাবছিলাম এখানে বোধহয় চা- ও সেলে ওঠে!”
সটান পুজোয়
ইতিমধ্যে কেশপুরের একাধিক মন্দিরে গিয়েছেন। মসজিদেও গিয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেশপুরে প্রচার সেরে মেদিনীপুরে ফিরছিলেন শিউলি সাহা। হলদিয়ার প্রাক্তন বিধায়ককে এ বার কেশপুরে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। শিউলিদেবীর সঙ্গে ছিলেন মেদিনীপুরের যুব তৃণমূল নেতা সৌরভ বসু। ফেরার সময় সৌরভ জানিয়েছিলেন, “দিদি, আজ বাড়িতে অমাবস্যার পুজো হচ্ছে। একবার ঘুরে যাবেন।” এককথায় রাজি হয়ে যান শিউলিদেবী। সৌরভের বাড়িতে এসে নিজে পুজোও দেন তিনি। সৌরভ বলছিলেন, “দিদি কেশপুরে এসেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর একটা সংস্কার রয়েছে। তিনি দিনক্ষণ দেখেই কেশপুরে আসতে চেয়েছিলেন। তাই দিদিকে বাড়ির অমাবস্যা পুজোয় আসার কথা বলি। হ্যঁা বলতে উনি সময়ও নেননি! সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান। নিজেও পুজো দিয়েছেন।” তৃণমূলের এক কর্মী অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “ভোট বড় বালাই!”
৪৪ কোম্পানি
নির্বাচনের জন্য জেলায় আসছে ৪৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। ঝাড়গ্রাম মহকুমাটি মাওবাদী উপদ্রুত হওয়ায় সেখানে বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে। প্রশাসন জানিয়েছে, ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার জন্য ২৪ কোম্পানি ও পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ জেলার জন্য ২০ কোম্পানি বাহিনী আসবে। ইতিমধ্যেই জেলায় ৩৬ কোম্পানি বাহিনী এসে গিয়েছে। এরমধ্যে ঝাড়গ্রামের জন্য ১৯ কোম্পানি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য ১৭ কোম্পানি বাহিনী রয়েছে। আজ অর্থাত্ বৃহস্পতিবারই বাকি বাহিনীও জেলায় পৌঁছে যাবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাহিনী রুটমার্চ করাও শুরু করেছে। সব বাহিনী এসে গেলে টহল আরও বাড়ানো হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
ছাত্রদের কাছে
ছাত্র জীবনেই রাজনীতিতে হাতে খড়ি। এক সময় গড়বেতা কলেজে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি। প্রচারে নেমে তাই প্রথমেই ছাত্রছাত্রীদের কাছে হাজির হলেন গড়বেতার সিপিএম প্রার্থী সরফরাজ খান। বুধবার গড়বেতা কলেজের পড়ুয়াদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথাও বলেন সরফরাজ। গড়বেতার সিপিএম প্রার্থীর নামে দেওয়াল লিখনও চলছে জোরকদমে। সরফরাজের কথায়, “এখন ছাত্রছাত্রী ও যুবদের কাছে বেশি যাচ্ছি। ধীরে ধীরে প্রচার আরও বাড়াব। তবে আমাদের তো সব জায়গায় সংগঠন রয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা তাঁদের মতো করে সর্বত্রই প্রচার করছেন।”