রথযাত্রা: লালগড়ে। ফাইল চিত্র
পুরী, মায়াপুর ছেড়ে এ বার লালগড় ও গোপীবল্লভপুর। রথের রশিতে টান দিতে চলে আসতেই পারেন ঝাড়গ্রামে।
রথযাত্রা উপলক্ষে এমন প্যাকেজ নিয়ে ভাবছে জেলার একাধিক পর্যটন সংস্থা। ঝাড়গ্রাম জেলায় লালগড়ের ও গোপীবল্লভপুরের রথের মাহাত্য সুপ্রাচীন। রথযাত্রার দিনে লালগড়ের সাহসরায় রাজ পরিবারের কুলদেবতা রাধামোহন জিউ সপার্ষদ রথে চড়েন। আবার বৈষ্ণবক্ষেত্র শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরের চারশো বছরের পুরনো রথযাত্রাও ঐতিহ্যবাহী। লালগড় ও গোপীবল্লভপুরে রথের সেই জাঁক ফিকে হলে এলেও দুই জায়গাতেই বিপুল জনসমাগম হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে রথ নিয়ে আবেগও প্রবল।
জঙ্গলমহল শান্ত হওয়ার পরে গত কয়েক বছর গ্রীষ্ম ও বর্ষার মরসুমেও পর্যটকরা ঝাড়গ্রামে এসেছেন। এ বার রথযাত্রা ২৫ জুন, রবিবার। সেই দিনটিকে ঘিরে পর্যটন সংস্থাগুলি তাই প্যাকেজও তৈরি করে ফেলেছে।
রথের দিনে লালগড়ে অথবা গোপীবল্লভপুরে চারপাশের দর্শনীয় জায়গাগুলির সঙ্গে রথযাত্রার অনুষ্ঠানও দেখানো হবে পর্যটকদের। ঝাড়গ্রামের একটি পর্যটন সংস্থা ‘ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম’-এর কর্তা সুমিত দত্ত জানালেন, বৈচিত্র্য আনার জন্য রথ কেন্দ্রিক প্যাকেজ করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গাগুলি যেমন দেখানোর দেখানো হবে। বিকেলে লালগড়, গোপীবল্লভপুরে নিয়ে যাওয়া হবে। রথের সমস্ত আচার অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন পর্যটকরা। রশিতে টান দেওয়ার সুযোগও থাকছে। আর এক পর্যটন সংস্থা ‘জঙ্গলমহল অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম’-এর কর্ত্রী দেবযানী কর্মকার জানাচ্ছেন, “লালগড় নামটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জঙ্গলমহলের রক্তাক্ত ইতিহাসের স্মৃতি। কিন্তু গত ছ’বছরে লালগড় অনেক বদলে গিয়েছে, সেটাও দেখানো হবে পর্যটকদের।”
রথযাত্রার দিন লালগড়ের বাবুপাড়ার মন্দির থেকে রাধামোহন ও শ্রীমতী এবং পার্শ্বদেবদেবীদের নিয়ে আসা হয় রথতলায়। কেবলমাত্র এ দিনই রাধামোহন ও শ্রীমতীকে সোনার অলঙ্কারে সাজানো হয়। স্থানীয় হাটচালায় মাসির বাড়িতে পৌঁছে যাত্রা শেষ হয়। সেখানে আট দিন ধরে চলে রথের মেলা। আবার লালগড়ের সাহসরায় রাজ পরিবারের উদ্যোগে রাধামোহনের রথযাত্রার অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল ১৭১০ খিস্টাব্দে। লালগড় রাজ পরিবারের সদস্য দর্পনারায়ণ সাহসরায় জানালেন, আগে লালগড়ে ৬০ ফুট উঁচু ১৬ চাকার কাঠের প্রাচীন রথ ছিল। সেটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ১৯৯১ সালে ২০ ফুট উঁচু আট চাকার লোহার রথ তৈরি করানো হয়।
গোপীবল্লভপুরে রথের দিনে রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে জগন্নাথ, সুভদ্রা, বলরামের তিনটি রথ বের হয়। ১৬১৫ খিস্টাব্দে বৈষ্ণবাচার্য শামানন্দ ও তাঁর শিষ্য রসিকানন্দের উদ্যোগে গোপীবল্লভপুরে রথযাত্রার উৎসব শুরু হয়েছিল। এখন গোপীবল্লভপুরের মহান্ত কৃষ্ণকেশবানন্দ দেব গোস্বামীর উদ্যোগে রথযাত্রা পালিত হয়।