কাকভেজা হয়ে মঞ্চে নেতারা। —নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার বিকেল। অরণ্যশহরের রবীন্দ্রপার্ক লাগোয়া ছোট মাঠে তিল ধারণের জায়গা নেই। আকাশ-কালো মেঘ দেখে প্রমাদ গোনেন মঞ্চে হাজির শাসক দলের জেলা নেতারা। কারণ মঞ্চে বা সভায় লোকজনের বসার জায়গায় মাথা বাঁচানোর জন্য ত্রিপল-ছাউনির কোনও ব্যবস্থা ছিল না। চারটে নাগাদ তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব সূচনা-বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে প্রবল দমকা হাওয়ার সঙ্গে ঝেঁপে নামল স্বস্তির বৃষ্টি। মাঠের জনতা তখন ছত্রভঙ্গ হয়ে ছোটাছুটি করছেন। উত্সাহী কেউ কেউ অবশ্য কিছুটা দূরে ছাতা মাথায় কিংবা পলিথিন মাথায় ভিজে-কাক হয়ে একনিষ্ঠ শ্রোতার ভূমিকায় দাঁড়িয়ে। আকাশ ভাঙা বৃষ্টির মধ্যেও সভা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জেলা সভাপতি দীনেন রায়।
গত ১ জুন এই মাঠেই সভা করেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সেই সভায় পুলিশের হিসেবে সাড়ে তিন হাজার লোক হয়েছিল। দশ দিনের ব্যবধানে পাল্টা সভায় বিশ হাজার জমায়েত করার দাবি করেছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিন বিকেল ৩টে নাগাদ ঝাড়গ্রাম মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে সভাস্থলে আসতে শুরু করেন শাসক দলের কর্মী-সমর্থকরা। কিন্তু আকাশের মুখভার দেখে অনেকেই প্রথমে মাঠে বসার ঝুঁকি নেন নি। তড়িঘড়ি সভার কাজ শুরু হতেই অবশ্য মাঠ ভরে যায়। শুরু হয় ঝুমুর গান। এরপর সভার সভাপতি দুর্গেশবাবু সূচনা-বক্তৃতা শুরু করতেই কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝেঁপে বৃষ্টি নামে। মঞ্চে নেতাদের মাথা বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টার জন্য ছাতা কিংবা হাতের কাছে টেবিলের পলিথিন-ক্লথই তখন ভরসা। আর ভরসা মাইক্রোফোন। মাঠে লোক না থাকুক, মাইক্রোফোনের আওয়াজ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। মূষল ধারায় বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে শোনা যায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, প্রদ্যোত্ ঘোষ, আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার
হাঁসদার বক্তৃতা।
সভায় জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ অভিযোগ করেন, “জঙ্গলমহলের শান্তি ও উন্নয়নের ধারাকে স্তব্ধ করার জন্য সিপিএম ও বিজেপি চক্রান্ত শুরু করেছে। বিরোধীদের সঙ্গে অশুভ শক্তির আঁতাত হয়েছে। সেজন্য এখন জঙ্গলমহলের সীমান্ত এলাকাগুলিতে মাওবাদীরা উঁকিঝঁুকি মারছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের দাবি, “এ দিন বাস, পিক আপ ভ্যান, গাড়ি মিলিয়ে পাঁচশোর বেশি যানবাহনে হাজার-হাজার মানুষ এসেছিলেন। জঙ্গলমহলের মানুুষ আমাদের সঙ্গে আছেন, এটা তার প্রমাণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সভার লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে যান। অনেকে বৃষ্টির কারণে গাড়ি থেকে নামতে পারেন নি।” সভাশেষে অবশ্য দীনেনবাবুরা গামছা আর লুঙ্গি পরে মেদিনীপুরে ফেরেন। বৃষ্টিস্নাত নেতাদের জন্য দলীয় কর্মীরাই দোকান থেকে লুঙ্গি আর গামছা কিনে আনেন।
সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ সরকারের কটাক্ষ, “সভায় তেমন লোকই জোটাতে পারে নি তৃণমূল। বরং বৃষ্টির জন্য দীনেনবাবুদের মুখরক্ষা হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এরপর ওরা গামছা পরেই ঘুরবেন।”