ফল কেনার ভিড়। নিজস্ব চিত্র।
একে তো দারুন গরম তার উপর বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি। ফসল পাকার আগেই সেই বৃষ্টিতে বেশ ক্ষতি হয়েছে চাষের। ফলে সব্জির দাম আকাশছোঁয়া। চাহিদার তুলনায় জোগানও বেশ কম। এরই মধ্যে আজ শুক্রবার বাঙালির সাধের জামাইষষ্ঠী। অর্থাৎ বাজার আগুন।
বৃহস্পতিবারই ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন বাজারে সেই আগুনের আঁচ বেশ টের পাওয়া গিয়েছে। সাত সকালেই বাজার থেকে উধাও সব্জি। অমিল মাছও। বুধবার পর্যন্ত যে সব্জি দশ টাকায় বিক্রি হয়েছে, একলাফে তা বেড়ে হয়েছে কুড়ি টাকা। রাজ্য উদ্যানপালন দফতরের এক কর্তার দাবি, সব্জির দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী বৃষ্টিই।
তবে সে যাই হোক, ভিড় কিন্তু কমেনি। এ দিন ঘাটালের কুঠিবাজার, পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড বাজার, টালিভাটা, দাসপুর, সোনামুই, চন্দ্রকোনার গাছ শিতলা-সহ বিভিন্ন বাজারেই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। আর সেই ভিড়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে বাজারে ভিড় করেছেন বয়স্ক শ্বশুর। হাসি মুখে বাজারে ঢুকেই দাম শুনে কপালে ভাঁজ শাশুড়িদের। সাধ্যমতো কিছু না কিছু কিনে বাড়ি ফেরেছেন তাঁরা। কিন্তু মুখ বেজার।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এখন গ্রীষ্মকালীন সব্জির মরসুম চলছে। মাস দেড়েক আগেই ফলন শুরু হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির অভাব অথচ ভ্যাপসা আবহাওয়ায় ফলনের আগেই গাছ শুকিয়ে গিয়েছে। তারই মধ্যে গত কয়েকদিনে বৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই বৃষ্টি ধান-পাটের জন্য ভাল হলেও সব্জির পক্ষে খারাপ। ফলে বৃষ্টির প্রভাব সরাসরি পড়েছে বাজারেও।
অন্য দিকে ষষ্ঠীর কারণে বৃহস্পতিবার মাছ বাজারেই ছিল লম্বা লাইন। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রচণ্ড দাবদাহে অনেক পুকুরের জল শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে পুকুরে চাষ হওয়া মাছের জোগানও বেশ কম। রাজ্যের বাইরে থেকে মাছ আসছে বটে। কিন্তু তার দাম শুনেই ক্রেতারা পিছু হঠছেন। বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড বাজারে এক কিলো ওজনের ইলিশের দর ছিল ১৩০০-১৪০০ টাকা, ভেটকি ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০-৮০০ টাকা, চিতল ৬০০ টাকা। আড়াই-তিন কিলো ওজনের কাতলার দাম ৩৫০ টাকা। ঘাটালের এক মাছ ব্যবসায়ী অমিত দণ্ডপাট বলেন, “শুক্রবার দাম আরও বাড়বে। এ দিন আমি ২০ কিলো ইলিশ বাজারে এনেছিলাম। সবই বিক্রি হয়ে গিয়েছে।’’ মাছের দামা নিয়ে লজ্জিত অমিত জানালেন, ‘‘বেশিরভাগ ক্রেতাই তো পরিচিত, দাম বলতেই খারাপ লাগছে।”
ঘাটাল শহরের কোন্নগরের বাসিন্দা শিখা মাইতি বাজারে এসে অবাক। তাঁর কথায়, “আমি বাজারে আসি শুধু পুজোর সময় আর জামাই ষষ্ঠীর আগের দিন। যা ভেবে এসেছিলাম, তার অর্ধেকও বাজার করতে পারিনি। ফুলকপি কেনা হয়নি, ইলিশের বদলে ছোট একটা রুই মাছ নিয়েই বাড়ি ফিরেছি।”