ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি বেলপাহাড়ি সফরে এসেছিলেন হুগলির সাতজনের একটি ‘মহিলা-দল’। সারাদিন গাড়রাসিনি, খাঁদারানি ড্যাম, লালজল, কাঁকড়াঝোর, ঘাঘরা-সহ বিভিন্ন এলাকা চষে ফেলেন তাঁরা। দিনের শেষে এলাকায় পর্যটনের সার্বিক পরিকাঠামো দেখে কার্যত বিরক্ত ব্যান্ডেলের নিবেদিতা সরকার, শ্রীরামপুরের পাপিয়া দাসেরা বলছিলেন, ‘‘বেলপাহাড়ির প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রই খুব সুন্দর। কিন্তু কোথাও শৌচালয় নেই।’’
আবার, শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির অমৃতা ভট্টাচার্য, শান্তনু ভট্টাচার্য-সহ আটজনের একটি বেলপাহাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন। সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁদেরও। অমৃতার কথায়, ‘‘মহিলা পর্যটকদের জন্য এখানে শৌচালয়, বিশ্রামাগার খুবই প্রয়োজন।’’
দিন কয়েক আগেই, বিরসা মুণ্ডার জন্মদিনে বেলপাহাড়িতে এসে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঝাড়গ্রামকে কেন্দ্র করে ট্যুরিজ়ম সার্কিট করা হচ্ছে। যেটা ঝাড়গ্রাম থেকে বাঁকুড়া পর্যন্ত হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, পর্যটনের মাধ্যমেই ঝাড়গ্রামে কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বেলপাহাড়ি-সহ জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পর্যটনের কোনও পরিকাঠামোই নেই। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বার পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু ওই পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে শৌচালয়, বিশ্রামাগার তো দূরের কথা, নেই পানীয় জলেরও ব্যবস্থাও। ফলে দূর-দুরান্ত থেকে পর্যটকরা এসে সমস্যায় পড়ছেন। বিশেষ করে মহিলা ও বয়স্করা। বিষয়টি নিয়ে বারে বারেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে পর্যটন সংস্থাও। ঝাড়গ্রাম জেলা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার বলেন, ‘‘জেলায় প্রচুর হোম-স্টে হয়েছে। কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে কোথাও শৌচালয় বা বিশ্রামাগার নেই। জেলার অধিকাংশ পর্যটন কেন্দ্রগুলির কোনও উন্নয়ন হয়নি।’’
মুখ্যমন্ত্রী গত মে মাসেও ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে এসেই ঝাড়গ্রামের পর্যটন ব্যবস্থার উপর জোর দিতে বলেছেন। এই জেলার ভারী শিল্পের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই পর্যটন ব্যবস্থার উপর জোর দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিক ভাবে সমৃদ্ধ করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর জেলায় ১০০টি হোম-স্টে করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে প্রশাসন। বেলপাহাড়ির উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রগুলি হল ঘাঘরা, গাড়রাসিনি, খাঁদারানি ড্যাম্প, লালজল, কাঁকড়াঝোর ইত্যাদি। বেলপাহাড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলি বন দফতরের অধীনে রয়েছে।
শীতের মরসুম ছাড়াও প্রতিদিনই এই পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে প্রচুর পর্যটক আসেন। অথচ গত ১১ বছরে জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলির বাথরুম বা শৌচালয়, পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। পর্যটন দফতর স্বীকৃত ঝাড়গ্রামের একটি পর্যটন সংস্থার কর্ণধার সুমিত দত্ত বলেন, ‘‘আমরা গতবার মুখ্যমন্ত্রীকে ২১ দফা দাবিপত্র দিয়েছিলাম। সেই দাবিপত্র নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। ফলে সমস্যা পড়ছেন পর্যটকেরা।’’ বিষয়টি নিয়ে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘আগামী দেড় মাসের বন দফতরের অধীনে পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে শৌচালয়, স্তন্যপান কক্ষ তৈরি করব।’’