আনন্দপুরের খামারে মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। শনিবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
ধুঁকতে থাকা কৃষি খামার পরিদর্শনে এসে প্রতিশ্রুতির দীর্ঘ তালিকা দিয়ে গেলেন কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। তাঁর কথায়, “এখানে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। লাভজনক বীজ তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে এই খামারকে তৈরি করতে হবে। কী কী করলে এই কৃষি খামারকে পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করা যায়, তার তালিকা পাঠাতে বলেছি। আগামী বছর থেকে এটা ভাল ভাবেই চলবে।” সঙ্গে দফতরের কর্তাদের তাঁর বার্তা, “কাজ ফেলে রাখবেন না। সময়ের কাজ সময়ে করুন।”
কেশপুরের আনন্দপুরের কৃষি খামারটি বেশ বড়। মূলত আলু বীজ নিয়েই এখানে গবেষণা হয়। বীজ তৈরিও হয়। খামারের আওতায় প্রায় ছ’শো একর জমি রয়েছে। তবে খামারটি পরিকাঠামোগত নানা সমস্যায় ধুঁকছে। কর্মী সঙ্কটে ভুগছে খামারটি। জমিও বেহাত হতে বসেছে। সমস্যার কথা মেনে কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ আনন্দমোহন গড়াই কৃষিমন্ত্রীর কাছে লিখিত ভাবে কয়েকটি দাবি জানান। দাবিগুলো খতিয়ে দেখে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন পূর্ণেন্দুবাবু। আনন্দমোহনবাবুর কথায়, “এই খামারের হাল ফেরাতে গেলে কী কী করা দরকার, তাই লিখিত ভাবে মন্ত্রীকে জানিয়েছি। আমি নিশ্চিত, এলাকার উন্নয়ন ও কৃষকদের স্বার্থে বিষয়গুলো উনি বিবেচনা করে দেখবেন।”
শনিবার দুপুরে কৃষি খামার পরিদর্শনে আসেন কৃষিমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি, জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ, কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুভ্রা দে সেনগুপ্ত প্রমুখ। খামারের কাজু বাদামের বাগান, আম বাগান, আলু বীজ তৈরির জমি ঘুরে দেখেন পূর্ণেন্দুবাবু। পরে মাছ চাষের পুকুরেও যান। এরই ফাঁকে দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আনন্দপুরের এই খামারের জমির কিছু সমস্যা রয়েছে। কর্তারা জানান, জমির সমস্যা মেটাতে গেলে ভূমি ও বন দফতরের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। বিষয়টি শোনা মাত্র বিধায়ক মৃগেনবাবুকে মন্ত্রী বলেন, “মৃগেনদা, ব্যাপারটা দেখে নেবেন তো। তারপর যা যা করণীয়, আমি করব।” সায় দেন বিধায়ক। যারা খামারের জমি দখল করে বাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন তাদের প্রসঙ্গে পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “আমরা কাউকে মেরেধরে তাড়ানোর পক্ষে নই। বিকল্প ব্যবস্থা করে উচ্ছেদ হতে পারে। অনেক দিন বাড়ি হয়ে থাকলে আলোচনায় সমস্যার সমাধান করতে হবে।’’
কেন জেলার চাষিদের এখনও পঞ্জাবের বীজের উপর নির্ভর করতে হয়? কৃষিমন্ত্রীর জবাব, “আলু পুঁতলেই বীজ হয়ে যাবে এমনটা নয়। বীজ তৈরি করতে গেলে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা দরকার। আমরা কাজটা শুরু করেছি। এ বছর এখানে আলু বীজ তৈরিও হয়েছে।” আলু ও ধান চাষে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “অধিক ফলন হলে বাজারে দাম একটু কমবেই। এটা অর্থনীতির সাধারণ বিষয়।’’ তিনি জানান, এ বার চালকলের সামনে শিবির করে ১৩৭৫ টাকা কুইন্ট্যাল দরে ধান কেনা হবে। প্রতি কিলোমিটার গাড়ি ভাড়া বাবদ চাষিদের সাড়ে ৮ টাকা করেও দেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গে এটা শুরু হয়েছে। এ বার দক্ষিণবঙ্গেও শুরু হবে।
রাজ্য সরকার বিকল্প চাষে জোর দিচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী। জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মলবাবুরও স্বীকারোক্তি, “নতুন পরিকল্পনা তৈরি করে খামারের উন্নতি করতে চাই। এখানে যে পরিমাণ জমি রয়েছে, তাকে সঠিক ভাবে কাজে লাগানো হবে।” কৃষিমন্ত্রীও বলেন, “রাজ্যে ১৯৪টি কৃষি খামার আছে। প্রথম পর্যায়ে ৫০- ৬০টি কৃষি খামার আমরা ভাল করে তৈরি করতে চাই। এরমধ্যে এটাও আছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে যাতে বাকিগুলোকে ঠিক জায়গায় নিয়ে আসতে পারি, সেই পরিকল্পনাই নিচ্ছি।”অন্য দিকে, এ দিনই মেদিনীপুরে কৃষি দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। খড়্গপুর- ১ এর ক্ষতিগ্রস্ত ১০ জন বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষি আধিকারিক নিমাইচন্দ্র রায়। এ বার বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে সমীক্ষাও চালানো হয়।