দুর্ভোগ: বাস না থাকায় মেদিনীপুরের সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অটো। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
কোথাও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও বাস পেলেন না অনেকে, কোথাও আবার ঝুঁকি নিয়ে বাদুড় ঝোলা হয়েই বাসে সওয়ার হলেন কেউ কেউ। মেদিনীপুর, খড়্গপুর- দুই শহরেই শুক্রবার দিনভর দুর্ভোগের শিকার হলেন নিত্যযাত্রীরা।
কলকাতায় তৃণমূলের শহিদ সমাবেশের জন্য দিন দু’য়েক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল বাস ভাড়া। রাস্তাতেও কমছিল বাসের সংখ্যা। শুক্রবার রাস্তা থেকে কার্যত উধাও হয়ে যায় বাস। জেলার ওপর দিয়ে প্রতিদিন ৮০০ বাস চলাচল করে। বাস মালিক সংগঠনের এক সূত্রে খবর, সমাবেশের জন্য ৬৫০- রও বেশি বাস তুলে নিয়েছিল তৃণমূল।
বাস কম চলায় অধিকাংশ স্কুলেই পড়ুয়াদের হাজিরা ছিল কম। মৌপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া মানছেন, “এ দিন ছাত্রছাত্রীদের হাজিরা অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল।” অনেকে পথে বেরিয়ে বাস না পেয়ে অটো-ট্রেকারে করেই গন্তব্যে পৌঁছন। খাকুড়দাগামী বাস ধরার জন্য দীর্ঘক্ষণ বাসস্ট্যাণ্ডে অপেক্ষা করেছেন অমিত দাস। মেদিনীপুর থেকে অবশ্য এই রুটের বাস মেলেনি। বাধ্য হয়ে অটোয় করে খড়্গপুর যান তিনি। অমিতবাবুর কথায়, “এক পরিজনেরা শরীর খারাপ। খাকুড়দা যেতেই হবে। আগে খড়্গপুরে পৌঁছই। দেখি খড়্গপুর থেকে ওই রুটের কোনও বাস মেলে কি না!”
বেলদা-দাঁতন রুটের বাস ধরতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েন দাঁতনের নেকুড়সীনি হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী গীতা মাইতি। সে বলে, “সকালে স্কুলে আসার সময় বাস পেয়েছিলাম। কিন্তু স্কুল থেকে বেলদায় টিউশনে যাওয়ার জন্য এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে একটি বাস পেলাম। বাসের মধ্যে অবশ্য তিলধারনের জায়গা ছিল না।” কেশিয়াড়ি, সবং, পিংলাতেও ছবিটা ছিল কমবেশি একই। কেশিয়াড়ির বাসিন্দা রবি মাণ্ডি বলছিলেন, ‘‘সকালে খড়্গপুরে কাজে যাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও বাস পাইনি। শেষমেশ ট্রেকারে করে যেতে হল। কিন্তু ট্রেকারে যে ভাবে ২৮-৩০ জন উঠেছিল তাতে জীবন হাতে নিয়েই যেতে হয়েছে।”
খড়্গপুর শহরেও বাস ছিল অন্যদিনের তুলনায় অনেক কম। এ দিন খড়্গপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌনে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়েও বাস পাননি বেসরকারি সংস্থার কর্মী অতুল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “মেদিনীপুর যাব বলে প্রায় ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে রয়েছি, একটাও বাস নেই।”
যাত্রী দুর্ভোগের কথা মানছে শাসক দলও। তবে পরিবহণ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার কথা মানতে নারাজ তারা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির কথায়, “এই সময়ের মধ্যে বিকল্প যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। প্রচুর অটো-ট্রেকার নেমেছে। তাই পরিবহণ ব্যবস্থা অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল!”
যাত্রী দুর্ভোগের কথা মানছেন বাস মালিকেরা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতির কথায়, “কলকাতার সমাবেশের জন্য বেশির ভাগ বাসই তুলে নেওয়া হয়েছে। তাই শুক্রবার খুব কম বাসই চলেছে। বাস কম থাকায় যাত্রীরা সমস্যায় পড়েছেন।” আজ, শনিবারও পশ্চিম মেদিনীপুরের কমবেশি সব রুটে দুর্ভোগ চলবে। কারণ, সব বাস থাকবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে রবিবার হয়ে যাবে।