ইন্দিরা আবাস যোজনা

বাড়ি তৈরিতে অগ্রাধিকার এ বার লোধা-শবরদের

লোধা উন্নয়নে একের পর এক প্রকল্প তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরে। আবার ঠিক একই ভাবে সে সব প্রকল্পই চলে গিয়েছে ব্যর্থতার গর্ভে। দিন কয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ আগামী অর্থবর্ষের জন্য লোধাদের আবাসন প্রকল্পের বরাদ্দও একেবারে ছেঁটে ফেলেছে। বারবার অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে বছরের পর বছর লোধা উন্নয়নের টাকা পড়ে রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০০:৩৩
Share:

লোধা উন্নয়নে একের পর এক প্রকল্প তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরে। আবার ঠিক একই ভাবে সে সব প্রকল্পই চলে গিয়েছে ব্যর্থতার গর্ভে। দিন কয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ আগামী অর্থবর্ষের জন্য লোধাদের আবাসন প্রকল্পের বরাদ্দও একেবারে ছেঁটে ফেলেছে। বারবার অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে বছরের পর বছর লোধা উন্নয়নের টাকা পড়ে রয়েছে।

Advertisement

অভিযোগ যে অমূলক নয়, তা বোঝা যায় চারপাশে তাকালেই। লোধাদের বাড়ি যেমন তৈরি হয়নি, তেমনই সময়ে রূপায়ণ করা যায়নি ফলের বাগান, রাস্তা, পানীয় জল প্রকল্পের।

তবে এরই মধ্যে আশার আলো দেখিয়ে রাজ্য সরকার নতুন নির্দেশ জারি করেছে। সেই নির্দেশে আদিম জনজাতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে প্রতিটি লোধা পরিবারকে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী বলেন, “আমরা বিডিওদের জানিয়ে দিয়েছি যাতে গৃহহীন লোধা-শবর পরিবারের তালিকা দ্রুত তৈরি করা হয়। আগামী আর্থিক বছরের মধ্যেই প্রতিটি লোধা-শবর পরিবারের বাড়ি তৈরির কাজ আমরা শেষ করে দিতে চাই।”

যদিও এই নির্দেশে তেমন কোনও ভরসা রাখতে পারছেন না লোধারা। তাঁদের প্রশ্ন, “কাজটা হচ্ছে কোথায়?” অভিযোগ, লোধা উন্নয়ন খাতে বিভিন্ন দফায় কোটি কোটি টাকা এসেছে জেলায়। বাড়ি তৈরি করে দেওয়া, শিক্ষার প্রসার, স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে বাগান তৈরি করা প্রভৃতি নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর সে সব টাকা পড়েই থেকেছে। এমনকী বারবার আন্দোলন করেও কোনও সুরাহা হয়নি।

কেশিয়াড়ি ব্লকের সাতসোল গ্রামের টুকুন ভক্তা বলেন, “বহু কষ্টে ছিটেবেড়ার বাড়ি তৈরি করে রয়েছি। বর্ষায় আর শীতে যে কী কষ্ট হয় তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। সব জেনেও প্রশাসন কেন যে বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে না, জানি না।” দেবু দিগর বলেন, “বাড়ি না থাকায় আমাকে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে হয়। এর থেকে লজ্জার আর কী রয়েছে। বারবার আবেদন জানিয়েও বাড়ি মেলেনি।” লোধা শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাই নায়েকের আবার বক্তব্য, “বারবার তো শুনছি লোধা উন্নয়নে নানা প্রকল্প আসছে। নানা প্রতিশ্রুতির বন্যা বইছে। কিন্তু কাজটা হচ্ছে কোথায়? এক একটি গ্রামে ২-৩ জনকে বাড়ি দেওয়া হচ্ছে। অথচ, প্রয়োজন ২০-২৫ জনের। এ বার দেখা যাক কী হয়। না হলে ফের আন্দোলনে নামা ছাড়া উপায় থাকবে না।”

জেলা প্রশাসন অবশ্য দাবি করেছে, গৃহহীন লোধা-শবর পরিবার আর একটিও থাকবে না এ বার। ইন্দিরা আবাসে সকলের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে তালিকা তৈরির কাজও। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বলেন, “কারও নাম না উঠলে তিনি সরাসরি বিডিও অফিসে গিয়ে নাম তোলাতে পারেন। তাতেও সমস্যা হলে সরাসরি জেলাতেও যোগাযোগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ওই জনজাতির মানুষেরও সাহায্য চাইব।”

সমস্যাটা কিন্তু অন্যত্র। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ৭০ হাজার লোধা-শবর মানুষের বসবাস। পরিবারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার। ইন্দিরা আবাস যোজনায় সব বিপিএল পরিবারকে বাড়ি দেওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে শুধু লোধা-শবরদের কী ভাবে সবাইকে বাড়ি দেওয়া সম্ভব হবে? প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, গত বছর জেলা ইন্দিরা আবাস যোজনায় ৩৬ হাজার ৯৮৯টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন পাওয়া গিয়েছিল। এ বার সমস্ত জনজাতির মানুষের বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা থাকায় লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৪০ হাজার ৬৮৮টি করা হয়েছে। তফসিলি জাতির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১০ হাজার ৪৭১টি ও উপজাতির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৬ হাজার ৫৪৪টি।

কিন্তু লোধা-শবর ছাড়াও সাঁওতাল, ভূমিজ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন তফসিলি উপজাতিতে। সে ক্ষেত্রে ওই বরাদ্দে সকলের বাড়ি তৈরি করা কঠিন তো হবেই। প্রশাসনিক কর্তাদের যুক্তি, এমনটা হলে সাধারণ বরাদ্দ থেকে তাঁদের গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হবে। কারণ, এ বছরের লক্ষ্য আদিম জনজাতির বাড়ি তৈরি করা। যাঁরা বাইরে থেকে যাবেন, তাঁদের পরের আর্থিক বছরে গৃহনির্মাণ করে দেওয়া হবে। প্রশাসনের দাবি শুধু বাড়ি তৈরিই নয়, আদিম জনজাতি পরিবারগুলিতে শৌচাগার তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। আদিম জনজাতির ক্ষেত্রে এই প্রকল্প ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরের মধ্যেই শেষ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ করা হয়েছে।

তবে তা কতটা কার্যকর হল, তা সময়ই বলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement