তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ কাউন্সিলরের। প্রতীকী চিত্র।
সরকারি প্রকল্পে পাকা বাড়ি পাওয়ার তালিকায় নাম রয়েছে পরিবারের। বাড়ির অনুমোদনের জন্য নথিপত্রে সই করাতে কাউন্সিলরের কাছে গিয়েছিলেন ওই পরিবারের এক বৃদ্ধ। কাউন্সিলর তাঁকে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। বৃদ্ধের দাবি, দলবদল না করলে তাঁর বাড়ির অনুমোদন দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিজেপি কাউন্সিলর। তৃণমূল পরিচালিত তমলুক পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা। ওই বৃদ্ধ পুরপ্রধানের কাছে ১৭ মার্চ লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। বিজেপি কাউন্সিলর শর্বরী চক্রবর্তী ভট্টাচার্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
‘হাউসিং ফর অল’ প্রকল্পে পুরসভা এলাকায় দরিদ্র পরিবারগুলোকে পাকাবাড়ি তৈরিতে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য উপভোক্তা পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এবং পুরসভা মিলে ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা দেয়। পুরসভা সূত্রে খবর, এই প্রকল্পে প্রাপক পরিবারের তালিকা তৈরির জন্য কয়েক বছর আগেই সমীক্ষা করা হয়েছিল। ওই তালিকায় থাকা পরিবারের একাংশের পাকাবাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি পরিবারের জন্য ধাপে ধাপে অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে। এই প্রাপক তালিকায় নাম রয়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাপাসবেড়িয়ার বাসিন্দা শুকদেব ডিন্ডার। প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, নাম চূড়ান্ত হওয়ার আগে উপভোক্তা পরিবারের পাকাবাড়ি নেই, এই আবেদনে স্থানীয় কাউন্সিলরের স্বাক্ষর-সহ অনুমোদন লাগে।
শুকদেবের বাবা সন্তোষ দিন্ডার অভিযোগ, ‘‘সরকারি পাকাবাড়ি প্রাপক তালিকায় আমার ছেলের নাম রয়েছে। আমি আবেদনপত্র নিয়ে এলাকার বিজেপি কাউন্সিলরের অফিসে গিয়েছিলাম। সে সময়ে বিজেপি কাউন্সিলরের সঙ্গে থাকা বিজেপির লোকজন আমাকে অপমান করে বলেন, আপনি তৃণমূলের লোক হওয়া সত্বেও কেন বিজেপি কাউন্সিলরের কাছে এসেছেন। এরপরে কাউন্সিলরের কাছে আমার আবেদনপত্রে সম্মতিসূচক স্বাক্ষর করার জন্য বললে উনি বলেন, আপনি তো তৃণমূল করেন। আগে আমাদের বিজেপি দলে যোগদান করুন তার পর আপনার কাগজে সই করব কিনা ভেবে দেখব।’’ বৃদ্ধের অভিযোগ, ‘‘আমি তৃণমূল সমর্থক হওয়ায় পাকাবাড়ি প্রাপক তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও বিজেপি কাউন্সিলর আমাকে সাহায্য না করে অপমান করেছেন।’’
বিজেপি কাউন্সিলর শর্বরী চক্রবর্তী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হাউসিং ফর অল প্রকল্পে ওই বৃদ্ধের ছেলের নাম রয়েছে ঠিক। তবে প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী যে সব পরিবারের পাকাবাড়ি নেই তাঁদের অগ্রাধিকার দিয়ে সম্মতি দেওয়া হচ্ছে। ওই বৃদ্ধের পরিবারের পাকাবাড়ি রয়েছে। ওই বৃদ্ধ এসে আবেদনে স্বাক্ষর করতে বলেছিলেন। আমি বৃদ্ধকে সবকিছু বুঝিয়ে বলেছিলাম। তারপরে তৃণমূলের তরফে পরিকল্পিত ভাবে আমার বিরুদ্ধে ওই বৃদ্ধকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’’ শর্বরী বলেন, ‘‘কাউন্সিলর হিসেবে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক হিসেবে দেখি না। সমস্ত দলের মানুষ আমার কাছে আসেন। ওই বৃদ্ধকে বিজেপিতে যোগ দিতে বলার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আসলে আমি জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও আমাকে এড়িয়ে অন্য ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরকে দিয়ে বিভিন্ন স্বাক্ষর করিয়ে কাজ করানো হচ্ছিল। তা নিয়ে আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। তার পর চক্রান্ত করে এই অভিযোগ করানো হয়েছে। আমি পুরপ্রধানকে জানিয়েছি ওই বৃদ্ধের অভিযোগের প্রকৃত তদন্ত করা হোক।’’
তৃণমূলের তমলুক শহর সভাপতি তথা কাউন্সিলর চঞ্চল খাঁড়া বলেন, ‘‘কোনও পরিবার পাকাবাড়ি পাওয়ার উপযুক্ত হলে তাঁকে বঞ্চিত করা অন্যায়। আর বিজেপি না করলে বাড়ি পাওয়া যাবে না এ ধরনের চাপ দেওয়া হলে আমরা রাজনৈতিক ভাবেই তার মোকাবিলা করব।’’ পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধের অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’