Khejuri

ভগ্নদশায় সুভাষ শিল্প শিক্ষালয় 

সরকারি উদ্যোগের অভাবে ওই সব স্মৃতির অধিকাংশই এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দীর্ঘ দিন আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খেজুরি শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৪
Share:

অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে সুভাষ শিল্প শিক্ষালয়ের জিনিসপত্র। —নিজস্ব চিত্র।

স্বাধীনতার আগে খেজুরির জরারনগরে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু জনসভা করেছিলেন। তাঁর সেই আগমণকে স্মরণীয় করে রাখতে স্থানীয় উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল ‘সুভাষ শিল্প শিক্ষালয়’। রক্ষাণবেক্ষণের অভাবে সেটিই বর্তমানে বিলুপ্তির পথে।

Advertisement

১৯৩৮ সালের ১২ এপ্রিল খেজুরি-১ ব্লকের জরারনগরে জনসভা করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অখণ্ড মেদিনীপুরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয় আন্দোলন করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন তিনি। বিভিন্ন আঞ্চলিক ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এলাকার ভূমিপুত্র তথা জাতীয় শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্র প্রামাণিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নেতাজি সে সময় খেজুরিতে এসেছিলেন। সভার আগে তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।

পরে ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে ভারত। এলাকায় নেতাজির আসার নানা স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখতে পরবর্তীকালে উদ্যোগী হয়েছিলেন খেজুরিবাসী। এলাকার বিশিষ্টদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল ‘সুভাষ শিল্প শিক্ষালয়’। সেখানে এলাকার যুবক যুবতীদের বিভিন্ন হস্ত ও কুটির শিল্পের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। পাশেই গড়ে উঠেছিল সুভাষ স্মৃতি পাঠাগার। সমস্ত কিছু পরিচালনার দায়িত্ব ছিল ‘সুভাষ শুভাগমন স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি’। এলাকার নামকরণও করা হয় সুভাষ পল্লি।

Advertisement

সরকারি উদ্যোগের অভাবে ওই সব স্মৃতির অধিকাংশই এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দীর্ঘ দিন আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য কেনা যন্ত্র-সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছে। তার উপরে জমেছে ধুলো। ঘরগুলি শুধু ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেখানে নেতাজি এবং ঈশ্বরচন্দ্র প্রামাণিকের আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। দুটো মূর্তিই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মলিন। জমেছে শ্যাওলা। স্থানীয় বাসিন্দা সমরেশ সুবোধ পড়িয়া বলছেন, ‘‘সুভাষ শিল্প শিক্ষা কেন্দ্রটি অবিলম্বে চালু করা হোক। যাতে এলাকার যুবক-যুবতীরা আবার হস্ত ও কুটির শিল্পের প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বনির্ভর হতে পারেন। তাছাড়া নেতাজি এবং ঈশ্বরচন্দ্র প্রামাণিকের মূর্তি সংস্কার করা প্রয়োজন। পাশের হেঁড়িয়া স্টেশনের নাম নেতাজির নামে করা হোক।’’

খেজুরি-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নমিতা নায়ক বলছেন, ‘‘সরকারিভাবে নেতাজির শুভাগমনের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য যা যা করণীয়, সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।’’ তবে এই শিল্প শিক্ষালয়ের হাল নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর রয়েছে। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিক বলছেন, ‘‘স্বাধীনতার পর থেকে নেতাজির স্মৃতি ধরে রাখতে প্রথমে বামেরা এবং তারপর তৃণমূল কিছুই করেনি। তার জন্যই সমস্ত কিছু এখন মুছে যেতে বসেছে। আমরা হেড়িয়ার রেলস্টেশনের নামকরণ নেতাজির নামে করার জন্য রেল মন্ত্রকে জানিয়েছি।’’

এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলছেন, ‘‘ওই এলাকায় নেতাজি স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে ঠিকই। তাঁর নামাঙ্কিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং আবক্ষ মূর্তি সংস্কারের জন্য আমরা উদ্যোগী হব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement