বিধায়কের টাকা খরচে ‘আমরা-ওরা’, হলদিয়ায় সরব বাম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল

সিপিএমের বিধায়ক তিনি। তাই না কি এলাকা উন্নয়নে বিধায়ক তহবিলের অর্থ খরচ করা হচ্ছে না! হলদিয়া পুর এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের তাঁর দেওয়া বিধায়ক তহবিলের অর্থ খরচ না হওয়া নিয়ে এমনই অভিযোগ করেছেন হলদিয়ার বাম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল।   

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

সিপিএমের বিধায়ক তিনি। তাই না কি এলাকা উন্নয়নে বিধায়ক তহবিলের অর্থ খরচ করা হচ্ছে না! হলদিয়া পুর এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের তাঁর দেওয়া বিধায়ক তহবিলের অর্থ খরচ না হওয়া নিয়ে এমনই অভিযোগ করেছেন হলদিয়ার বাম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল।

Advertisement

বিধায়কের অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল হলদিয়ার উন্নয়ন নিয়ে ‘আমরা-ওরা’ তরজা শুরু হয়েছে শাসক ও বিরোধী শিবিরে। ২০১৬-’১৭ এবং ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে হলদিয়া পুরসভা বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা খরচ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন তাপসী দেবী। ফলে, এখনও জেলাশাসকের দফতরে হলদিয়া এলাকার উন্নয়ন তহবিলে পঞ্চাশ লক্ষের বেশি টাকা পড়ে রয়েছে বলে দাবি বিধায়কের। এই পরিস্থিতে গত ২১ জুন জেলাশাসক এবং হলদিয়া পুরসভার নির্বাহী আধিকারিককে লিখিত অভিযোগ জানান তিনি। তাতে কাজ না হওয়ায় বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও লিখিতভাবে বিষয়টি জানান। শাসক দলের পাল্টা দাবি, জনসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েই এখন এ সব অভিযোগ তুলছেন সিপিএম বিধায়ক।

প্রসঙ্গত, হলদিয়া পুরসভার ২৯টি ওয়ার্ড এবং সুতাহাটা ব্লকের ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে হলদিয়া বিধানসভা এলাকা। সুতাহাটা ব্লকে অর্থ খরচে কোনও অভিযোগ না থাকলেও পুরসভা তাঁর দেওয়া প্রস্তাব কার্যকর করছে না বলে অভিযোগ বিধায়কের। রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ‘বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল প্রকল্পে’ একজন বিধায়ক বছরে ৬০ লক্ষ টাকা পান। ওই অর্থ রাজ্য সরকার সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসকের কাছে পৌঁছে দেন। এরপর বিধায়ক এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রকল্প ও কত টাকা খরচ হবে তার উল্লেখ করে পাঠিয়ে দেন জেলাশাসকের কাছে। প্রকল্প রূপায়িত হলে সেখানে ‘বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল প্রকল্প’-এর খরচ ও প্রকল্পের উল্লেখ করে ডিসপ্লে বোর্ড লাগাতে হয়। ডিসপ্লে বোর্ডের ছবি-সহ ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জেলাশাসকের দফতরে জমা দেওয়া নিয়ম। কিন্তু হলদিয়া পুর এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পে যে সব প্রকল্পের প্রস্তাব তিনি পাঠিয়েছিলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ বিধায়কের।

Advertisement

সিপিএমের অভিযোগ, হলদিয়া পুরসভার ১৭ নম্বরৈ ওয়ার্ডে ডিঘাসিপুরে যাত্রী প্রতীক্ষালয় নির্মাণের জন্য স্থানীয় বিধায়ক প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতীক্ষালয়ে পুরসভার ‘ব্যানার’ লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ। বিধায়কের দাবি, তিনি দু’বছরে ৫০টি প্রকল্প দিয়েছিলেন জেলাশাসকের দফতরে। কিন্তু, একটি মাত্র অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া বাকিগুলি রূপায়ণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

প্রশাসন সূত্রে খবর, হলদিয়া পুরসভার বাসুদেবপুরে নলকূপ, রূপনারায়ণচক প্রাইমারি স্কুলের ছাদ নির্মাণ, হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে রোগীর পরিবারের লোকেদের থাকার জন্য বাতানুকূল ঘর নির্মাণের মতো প্রস্তাব ছিল। বিধায়ক বলেন, ‘‘একাধিকবার পুরসভা এবং জেলা প্রশাসনকে বিধায়ক তহবিলের অর্থ খরচের আবেদন জানিয়েছি। তা সত্ত্বেও কাজ করছে না পুরসভা।’’

বিধায়কের তহবিলের অর্থ পুরসভা খরচ না করায় শাসক দলের রাজনীতিই দেখছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল মাইতি বলেন, ‘‘আমাদের বিধায়ককে নিষ্ক্রিয় বলে অপবাদ দেওয়ার জন্য তৃণমূলের পুরসভা এ সব করছে। এর ফলে হলদিয়ায় উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুধাংশু মণ্ডলের অবশ্য দাবি, ‘‘বিধায়ক যে সব প্রকল্প পাঠান, তা এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে করে দেওয়া হয়। যদি কোনও প্রস্তাব কার্যকর না হয়ে থাকে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ এ বিষয়ে জেলাশাসক রশ্মি কমলের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও উত্তর মেলেনি। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) জানান, তিনি সদ্য জেলায় দায়িত্বে এসেছেন। কী কারণে ওই বিধায়কের পাঠানো প্রস্তাব কার্যকর হচ্ছে না খোঁজ নিয়ে দেখব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement