নন্দীগ্রামে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই শিল্পায়নের লক্ষ্যে হলদিয়ার পাশে নন্দীগ্রামে ‘কেমিক্যাল হাব’ গড়তে উদ্যোগী হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণ শুরু হলে বিপত্তির সূত্রপাত। আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে নন্দীগ্রাম।
২০০৭ সালের ১০ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশি অভিযানে জমি আন্দোলনকারীদের ১৪ জনের মৃত্যু হয়। যার জেরে ২০১১ সালে রাজ্যে গদি হারাতে হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তথা বামফ্রন্টকে। তবে সেই সময় নন্দীগ্রামের ঘটনাপ্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকা শাসক ও বিরোধী শিবিরে বিভিন্ন দলের স্থানীয় নেতৃত্ব প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোকাহত।
সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাসের কথায়,‘‘নন্দীগ্রামের মানুষ জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতায় আন্দোলন শুরু করায় বুদ্ধদেবের শিল্পস্থাপনের উদ্যোগ ধাক্কা খায়। তাঁর স্বপ্ন শেষ করে দেওয়া হয়।’’ হিমাংশু বলেন,‘‘২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের সময় বুদ্ধদেববাবু নন্দীগ্রামের লাগোয়া হেড়িয়াতে পাট্টা বিলি ও জনসভা করতে এসেছিলেন। ওই সভা থেকেই তিনি জানিয়েছিলেন, নন্দীগ্রামের মানুষ না চাইলে জমি নেওয়া হবে না।’’
নন্দীগ্রাম জমিরক্ষা আন্দোলনে অন্যতম মুখ তৃণমূল নেতা তথা জেলাপরিষদের প্রাক্তন সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান বুদ্ধদেবের প্রয়াণে স্মৃতিকাতর, শোকাহত। সুফিয়ান বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে যে সব ঘটনা ঘটেছিল, তা নিয়ে আমাদের বুকে ব্যথা আছে। তিনি দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নন্দীগ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা না বলে জোর করেই জমি অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। তাঁর দল তাঁকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিল। তবে মতবিরোধ দূরে রেখেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আমার শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’’
জমি আন্দোলনের সময়ে তৃণমূলের অন্যতম নেতা মেঘনাথ পাল পরে বিজেপিতে যোগ দেন। বর্তমানে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ বলেন,‘‘নন্দীগ্রামে মানুষের আন্দোলন দমনের ক্ষেত্রে উনি যে ভূমিকা নিয়েছিলেন, তা সঠিক ছিল না। দল ও দলের নেতৃত্বের কথা শুনতে গিয়ে ভুল করেছিলেন। তবে বুদ্ধদেবের মতো সজ্জন রাজনৈতিক ব্যক্তির প্রয়াণে আমরা ব্যথিত।’’ নন্দীগ্রামের জমি রক্ষা আন্দোলনের নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক মিলন প্রধানের কথায়, ‘‘বুদ্ধদেব যখন বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের জন্য অগ্রসর হলেন ততদিনে দীর্ঘ বামশাসনে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তুঙ্গে উঠেছিল। ফলে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের মতো ঘটনা ঘটেছিল।’’