মাস দেড়েক আগে উধাও হয়ে গিয়েছিল কেশপুরের এক কিশোরী। টিউশন পড়তে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল সে। আর ফেরেনি। শুক্রবার রাতে সেই কিশোরীকেই দিল্লির এক যৌনপল্লি থেকে সেই কিশোরীকে উদ্ধার করল পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কেশপুর এলাকার দুঃস্থ পরিবারের সন্তান ওই কিশোরী। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারেও অবশ্য সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন বাবা-মা। তাই অভাবের মধ্যেও দশম শ্রেণির ওই কিশোরীর পড়া বন্ধ হয়নি। গত ১৮ এপ্রিল সকালে বাড়ি থেকে বেরোয় বছর চোদ্দোর ওই কিশোরী। বলে যায় টিউশন যাচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। মেয়ে আর বাড়ি ফেরে না। পরিবারের লোকজন চিন্তিত হন। সন্ধ্যায় থানা-পুলিশ। কেশপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন বাবা। এরপরই ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ।
কী ভাবে নিরুদ্দেশ হয় ওই কিশোরী? পুলিশের এক সূত্রে খবর, ওই কিশোরীর সঙ্গে এক যুবকের মাস কয়েকের বন্ধুত্ব গড়িয়ে ছিল প্রেমে। অত:পর বিয়ের প্রস্তাব। মুখোমুখি আলোচনাতেই হয়েছিল বাড়ি থেকে পালানোর প্ল্যান। সংসার করার স্বপ্ন ভাঙতে অবশ্য দেরি হয়নি। মেয়েটি বুঝতে পারে, যুবকটি তাকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ততদিন অবশ্য আলোর দুনিয়া থেকে অনেক অনেক দূরে চলে গিয়েছে সে। দিল্লির যৌনপল্লিতে অজান্তেই কখন সে হাতবদল হয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে ঠাঁই হয় ঘুপচি ঘরে। শুরু হয় নিত্য দিনের অত্যাচার।
ভুল বুঝতে পেরে অন্ধকার দুনিয়া থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতে থাকে কিশোরী। কিন্তু, চাইলেই তো আর সব হয় না। বিশেষ করে এ ভাবে পাচার হয়ে যাওয়ার পর। চলতি সপ্তাহের গোড়ায় এক সূত্র মারফত পুলিশের কাছে খবর আসে, দিল্লির ভজনপুরার যৌনপল্লিতে কেশপুরের এক কিশোরী রয়েছে। এরপর কেশপুর থানার পুলিশের একটি দল দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেয়। সঙ্গে নেওয়া হয় মেয়েটির বাবাকেও। খোঁজখবর নেওয়ার পরই পুলিশ নিশ্চিত হয়, কেশপুরের ওই কিশোরীরই ঠাঁই হয়েছে দিল্লিতে। দিল্লি পৌঁছে শুক্রবার রাতে যৌনপল্লিতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। উদ্ধার হয় দুজন কিশোরী। একজন পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের। অন্য জন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ধোলার। পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া কিশোরীর বাবা কেশপুরে ফিরে অপহরণের অভিযোগ জানালে নতুন করে তার তদন্ত হবে। আপাতত, অভিযুক্ত যুবকের খোঁজ চলছে।
মেয়েকে পাওয়া গিয়েছে শুনে হাসি ফুটেছে মায়ের মুখেও। মেয়েকে পাওয়া গিয়েছে কোথা থেকে তা অবশ্য তিনি জানেন না। বাড়ির উঠোনে বসে তিনি বলেন, ‘‘এক মাস উনিশ দিন হয়ে গেল মেয়ের মুখটা দেখিনি। এক একটা দিন কি ভাবে কাটিয়েছি বলে বোঝাতে পারব না। আমরা লেখাপড়া জানি না। তবু চাই, ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করুক। মেয়ে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াবে।’’ চোখে জল চিকচিক করে দিনমজুর পরিবারের এই গৃহবধূর।