এই চাল দেখেই গুজব ছড়ায়। নিজস্ব চিত্র
চলতি মাসে সমস্ত সরকারি স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বিলি করা হয়েছে মিড ডে মিলের খাদ্য সামগ্রী। এই দফায় এবার চালের সাথে অদ্ভুত রকমের দেখতে কিছু দানা মেশানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকদের একাংশ। তাদের সন্দেহ সেগুলি প্লাস্টিক চাল। এই নিয়ে গুজবে আতঙ্কে অনেক অভিভাবক ওই চাল রান্না না করে বিক্রি করে দিচ্ছেন। কিছুদিন আগে মুর্শিদাবাদ জেলার কয়েকটি স্কুলেও মিড-ডে’র চাল নিয়ে একইরকম সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন অভিভাবকেরা। অনেকে সেই চাল রান্না না করে বিক্রি করে দেন। যদিও পূর্ব মেদিনীপুরে বিলি করা চাল নিয়ে বিতর্কে জেলা প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, শিশু ও পড়ুয়াদের বাড়তি পুষ্টির জন্য চালের মধ্যে মেশানো হয়েছে ‘ফর্টিফায়েড রাইস’। তাই এই চাল নিয়ে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই।
খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, ধান থেকে চাল তৈরির সময় চালের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ পদার্থ বাদ পড়ে যায়। এর ফলে চালের পুষ্টিগুণ কিছুটা কমে যায়। ‘ফর্টিফিকেশন’ পদ্ধতিতে সেই ভিটামিন, খনিজ পদার্থ আবার চালে যুক্ত করা সম্ভব। সেই চালের ভাত খেলে অনেক বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। শিশু ও স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টির অভাব দূর করতে চলতি মাস থেকে সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও সরকারি স্কুলে মিড-ডে মিলের চালের সাথে মেশানো হয়েছে ফর্টিফায়েড রাইস। চালের থেকে আকারে বেশ কিছুটা বড় ও পুরু এই বিশেষ ধরনের কণা দেখে সেগুলি প্লাস্টিক চাল বলে আশঙ্কা করছেন অনেক অভিভাবক। অপর্ণা দাস নামে কোলাঘাটের এক অভিভাবক বলেন, ‘‘স্কুল থেকে যে চাল দেওয়া হয়েছে তাতে প্লাস্টিকের মতো বড় বড় চাল দেখা যাচ্ছে। জলে ভেজালে সেগুলি ফুলে যাচ্ছে। চাল থেকে ওই সমস্ত বড় বড় চাল বেছে বাদ দিয়ে রান্না করছি।’’ কেউ আবার আতঙ্কে ওই চালের ভাত রান্নাই করছেন না। তেমনই এক অভিভাবক পাঁশকুড়ার প্রতিমা মান্না বলেন, ‘‘এবার ছেলের স্কুল থেকে যে চাল দিয়েছে তাতে অন্য ধরনের চাল মেশানো রয়েছে। ওগুলো ক্ষতিকর ভেবে ওই চাল রান্না করিনি।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বড় আকারের ওই চালের দানাগুলি আসলে ফর্টিফায়েড রাইস। এর মধ্যে রয়েছে আয়োডিন, ভিটামিন বি-১২, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন। চালের ওপর ভিটামিন ও খনিজের আবরণ দিয়ে তৈরি হয় ফর্টিফায়েড রাইস। পুষ্টিগুণ বাড়াতেই চালের মধ্যে কিছু সংখ্যক ফর্টিফায়েড রাইস মিশিয়ে বিলি করা হচ্ছে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, ‘‘পুষ্টি বাড়াতে মিড-ডে মিলের চালের সাথে এবার কিছু পরিমাণ ফর্টিফায়েড রাইস মেশানো হয়েছে। ওগুলি প্লাস্টিকের চাল নয়।ওই চালের ভাত অনেক বেশি পুষ্টিকর।’’
জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে অনেকে অভিভাবকের প্রশ্ন, এই বিষয়ে আগাম প্রচার করা হল না কেন? সে ক্ষেত্রে আতঙ্কের কোনও কারণ থাকত না। কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অনেক অভিভাবকই অভিযোগ করেছেন মিড ডে মিলের চলে প্লাস্টিকের চাল রয়েছে বলে। পরে খবর নিয়ে জানলাম ওগুলো ফর্টিফায়েড রাইস। জেলা প্রশাসনের তরফে স্কুলগুলিকে এ বিষয়ে আগাম জানালে অভিভাবকদের মধ্যে এই বিভ্রান্তি ছড়াত না।’’