মেশানো হচ্ছে কীটনাশক। নিজস্ব চিত্র
শুঁটকি মাছের নানা পদ ভোজন রসিক বাঙালির পাতে হামেশাই দেখা যায়। ওই শুঁটকিতেই বিভিন্ন কীটনাশক মেশানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী এলাকায় শুঁটকি তৈরি হয়। সম্প্রতি দিঘা-সহ বেশ কয়েকটি মৎস্য খটিতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, নানা সামুদ্রিক মাছের সঙ্গে বিভিন্ন রকমের কীটনাশক মিশিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, প্রাথমিকভাবে সামুদ্রিক মাছগুলি একটি বড় চৌবাচ্চায় জলে চুবিয়ে রাখা হয়। মরে যাওয়া ওই সামুদ্রিক মাছে যাতে কোনও ভাবে মাছি না বসে, সে জন্য ‘ওস্তাদ’, ‘গুম’ প্রভৃতি নামের কীটনাশক মেশানো হয়। এ ধরনের ওষুধ মূলত ধান-সহ অন্য কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়।
সুমিত্রা জানা নামে দিঘা মোহনার এক মৎস্যজীবী বলেন, ‘‘ফিতে মাছ, তাঁপড়া, আমোদি, ভোলা সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি তৈরির ক্ষেত্রে এ ধরনের কীটনাশক মেশানো হয়। তারপর জল থেকে ওই সব মাছকে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি হয়।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ বস্তা শুঁটকি মাছ রাজ্য-সহ বিহার, নেপাল, বাংলাদেশ রফতানি করা হয়। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা যায়। কিন্তু সেই শুঁটকিতে কীটনাশক মেশানো হচ্ছে!
কীটনাশকে ভেজানো শুঁটকি কি ক্ষতিকর? কাঁথির এক চিকিৎসক লক্ষীকান্ত ঘোড়াই জানাচ্ছেন, কীটনাশক মেশানো শুঁটকি খেলে চর্মরোগ, দৃষ্টিশক্তি নষ্ট, ফুসফুসের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। অভিযোগ, মৎস্যজীবীদের একাংশ প্রকাশ্যেই কীটনাশক দিচ্ছেন শুঁটকিতে। ওই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ।
এ ব্যাপারে দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের নেতা দেবাশিস শ্যামল বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এ ব্যাপারে একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু শুঁটকি মাছে কীটনাশক মেশানো কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।’’
বিষয়টি জেনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রামনগর-১ ব্লক প্রশাসন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা পাত্র বলেন, ‘‘শুঁটকি মাছে এভাবে কীটনাশক মেশানোর ঘটনা একেবারেই অজানা ছিল। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করব।’’