রবীন্দ্রপার্কের এখন এমনই দশা। নিজস্ব চিত্র
প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে! কিন্তু অরণ্যশহরে নির্জনে বসে দু’দণ্ড মনের কথা বলার মতো পার্ক কোথায়!
শুধু কী প্রেম দিবস, অনেক যুগলের কাছে সারা বছরই তো প্রেমের দিন। দিনান্তে কাজকর্মে সেরে প্রিয়জনকে নিয়ে নিরালায় বসে জিরোনোর মতো জায়গাও নেই শহর ঝাড়গ্রামে। নেই শিশুদের খেলার জন্য উপযুক্ত বিনোদন পার্কও।
অভিযোগ, শহরে যে ক’টা পার্ক রয়েছে সেগুলির হতশ্রী দশা। শহরে নেই কোনও প্রেক্ষাগৃহও। এক বছর হতে চলল ঝাড়গ্রাম জেলা হয়েছে। অথচ জেলা শহরে বিনোদনের জায়গা গড়ে ওঠেনি। অভিযোগ, শহরের ‘ফুসফুস’ রবীন্দ্রপার্কে যেটুকু শালগাছ ছিল, কংক্রিটের রাস্তা বানিয়ে সেগুলোর মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলেছে পুরসভা। কলেজ পড়ুয়া মণীশ কিংবা রিমিলদের কথায়, “কলকাতার যান্ত্রিক জীবনেও রবীন্দ্র সরোবর, ভিক্টোরিয়া আছে। আর আমাদের ঝাড়গ্রাম শহরে উপযুক্ত পার্ক নেই? শুধু প্রেমদিবস কেন, একান্তে সময় কাটানোর জন্যও শহরে তেমন জায়গাও নেই।”
ঝাড়গ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে রবীন্দ্রপার্ক। ষাটের দশকে প্রাকৃতিক শালজঙ্গলের মধ্যে উদ্যানটি গড়ে তোলে পূর্ত দফতর। পরে পার্কের দায়িত্ব নেয় পুরসভা। রবীন্দ্রপার্কে এখন হাতে গোনা মৃতপ্রায় কিছু শালগাছ রয়েছে। পার্কে শিশুদের খেলাধুলো ও বিনোদনের সরঞ্জামের সঙ্গেই সহাবস্থানে পুরসভার জলের গাড়ি, ট্র্যাক্টর সহ নানা সরঞ্জাম। নতুন খালি ভ্যাটগুলির আস্তানাও বানিয়ে ফেলা হয়েছে পার্কের একাংশে। সবুজ উধাও হয়ে চারিদিকে বালি, গুটি, সিমেন্ট পড়ে রয়েছে।
এছাড়াও শহরে আরও পাঁচটি পার্ক রয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে পার্কগুলি তৈরি ও সংস্কার হলেও উপযুক্ত নজরদারির অভাবে সেগুলিরও বেহাল দশা। জেলাশাসকের দফতরের উল্টোদিকে বয়স্কদের জন্য বৈকালিক পার্কটি বছর খানেক আগে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু পার্কটি তালা বন্ধ থাকে। লোকাল বোর্ড এলাকায় সঞ্চয়িতা পার্কে এক সময় বোটিং-এর ব্যবস্থা ছিল। এখন সেখানে ভূতুড়ে দশা। বোটিং হয় না। এমন আবহে ভরসা বলতে শহরের অদূরে জঙ্গলমহল চিড়িয়াখানার ভিতরে কংক্রিটের কয়েকটি ছাতা। যেখানে সব সময়ই জায়গা দখল করে থাকেন যুগলেরা। শহরের ‘লাভ রোড’ বা প্রেম গলিগুলোর চরিত্রও আমূল বদলে গিয়েছে। রাস্তার দু’পাশে বাড়িঘর হয়ে নির্জনতা উধাও! সাগর, বৈশালী, অগ্নিমিত্র, শিবাঙ্গীর মতো কলেজ পড়ুয়ার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার কর্মী রাঘব, পলাশ বা ইন্দ্রাণীও চান নিরালায় কথা বলার একটা জায়গা।
ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব অবশ্য বলেছেন, “শহরে একটি বড় মাপের বিনোদন উদ্যান তৈরির ভাবনাচিন্তা চলছে।” এ ছাড়া শহরে যে সব পার্ক রয়েছে সেগুলিকেও শিশুদের খেলার উপযোগী করে সাজানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।