দুই-ছবি: ভবানীপুরে বেহাল রাস্তা (বাঁ দিকে)। ওল্ড সেটেলমেন্ট এলাকায় হাইমাস্ট আলো। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
একদিকে রেল, অন্যদিকে পুরসভা। ভোট এলেই উন্নয়নের মাপকাঠিতে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে তার দড়ি টানাটানি চলে খড়্গপুর শহরে। আসন্ন উপ-নির্বাচনের আগেও শুরু হয়েছে সেই তরজা। শহরবাসীর দাবি, আলাদা নয়, পরিকাঠামোর সামগ্রিক উন্নয়ন হোক।
খড়্গপুর (সদর) বিধানসভার মধ্যে মূলত খড়্গপুর পুর এলাকাই পড়ে। ২০১৫ সাল থেকে খড়্গপুর পুরসভায় ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। আর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে খড়্গপুর (সদর) কেন্দ্র থেকে জেতেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার এ বার নিজেই উপ-নির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী। তাই তৃণমূল, বিজেপি এবং বাম-কংগ্রেস জোট— তিন প্রার্থীর প্রচারেই বারবার উঠে আসছে শহরের উন্নয়ন প্রসঙ্গ। পুরসভা কী কী কাজ করেছে প্রচারে তার খতিয়ান তুলে ধরছে রাজ্যের শাসক দল। বিরোধীদের পাল্টা দাবি, পুরসভার কাজে দুর্নীতি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কাজ যে একদম হয়নি তা নয়। গত কয়েক বছরে রেল ও পুরসভা দুই এলাকাতেই কিছু কাজ হয়েছে। পুরসভা বাতিস্তম্ভ, শ্মশানঘাট, পার্ক করেছে। রাজ্য সরকার বিদ্যুৎ চুল্লি, স্টেডিয়াম, ওটি রোড সম্প্রসারণের কাজ করছে। রেলও রাস্তা করেছে, পথবাতি বসিয়েছে। গিরি ময়দান উড়ালপুল হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হল, কোনও কাজই শহরের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা ভেবে হয়নি। তাই রেল বস্তির অনুন্নয়ন, জীর্ণ রেল কোয়ার্টার, ছাউনিহীন বাসস্ট্যান্ড, গোলবাজারের বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে যেমন ক্ষোভ রয়েছে, তেমনই পুর এলাকায় রাস্তা, আবাস যোজনা, অডিটোরিয়াম, মাঠ, যাত্রী প্রতীক্ষালয়, বাজারে ছাউনি নিয়েও অভিযোগ আছে। ঝাপেটাপুরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী মোহন রাও বলেন, ‘‘রেলের এলাকায় কোয়ার্টার, পার্ক, পথবাতির অভাব রয়েছে। আবার পুর এলাকায় গলিপথ বেহাল। আমরা চাই সার্বিক উন্নয়ন। রাস্তা সম্প্রসারণ, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি ও বাসস্ট্যান্ডে ছাউনির দিকে নজর দেওয়া হোক।”
নিয়ম অনুযায়ী, একজন বিধায়ক তাঁর এলাকা উন্নয়নের জন্য প্রতি বছর ৫০ লক্ষ টাকা পান। শহরের ক্ষেত্রে সেই অর্থ খরচ করতে হয় পুরসভার মাধ্যমে। বিজেপির অভিযোগ, দিলীপ ঘোষ বিধায়ক হওয়ার পরে এলাকা উন্নয়নের কাজে পুরসভার সহযোগিতা পাননি। তারপরেও বিধায়ক তহবিলের টাকায় শৌচাগার, শ্মশানঘাটের উন্নয়ন করা হয়েছে। তৃণমূলের পাল্টা প্রশ্ন, কেন্দ্রে এখন বিজেপি সরকার। তাহলে খড়্গপুরের রেলের এলাকাগুলি থেকে অনুন্নয়নের অভিযোগ আসছে কেন? এ বার নির্বাচনী ইস্তাহারে রেলের বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ, রেলবস্তির ১০ হাজার বাসিন্দার জন্য বাসস্থানের অঙ্গীকার করেছে তৃণমূল। কিন্তু সেই কাজ করতে হবে তো রেলের অনুমতি নিয়ে। সেক্ষেত্রেও টানাপড়েনের আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।
প্রচারে এসে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাজেটে তো খড়্গপুরের কথাই নেই। খড়্গপুরের মানুষ বিজেপি ও দিলীপকে সময় দিয়েছেন। আমাকে এক বছর দিন। উপরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবে। নিচে প্রদীপ সরকার। মাঝে আমি গ্যারেন্টার।” বিরোধীরা অবশ্য ইস্তেহার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। দিলীপ ঘোষের খোঁচা, “রাজ্যে সাড়ে আট বছর ও পুরসভায় সাড়ে চার বছর থেকেও আবার ইস্তাহার বের করতে হচ্ছে। এতেই প্রমাণ হয়ে যায় যে ওঁরা (তৃণমূল) কিছু করেনি।’’