টুসু গান করছেন মহিলারা। সোমবার বিকেলে বেলপাহাড়ির ভুলাভেদায়। —নিজস্ব চিত্র।
মকর পরবে মেতেছে জঙ্গলমহল। সোমবার পৌষ সংক্রান্তির দিন ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়ে অঘোষিত বনধের চেহারা দেখে অবাক হলেন পর্যটকরাও।
জঙ্গলমহলের সবচেয়ে বড় উৎসব---মূলবাসীদের মকর পরব ও আদিবাসীদের সাকরাত পরব। রবিবার রাতে বাড়ি-বাড়ি নানা ধরনের পিঠে তৈরির পাশাপাশি মূলবাসীদের ঘরে ঘরে সমৃদ্ধির দেবীর টুসুর আরাধনা হয়। সোমবার সংক্রান্তির সকালে নদী ও বিভিন্ন জলাশয়ে টুসু ভাসানের পর মকর স্নান সেরে নতুন পোশাক পরে পার্বণে মেতে ওঠেন জঙ্গলমহলবাসী। এদিন জেলায় সরকারি বাস চললেও বেসরকারি বাস প্রায় চলেইনি। ঝাড়গ্রাম জেলা বাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দিলীপকুমার পাল বলছেন, ‘‘এটা মূলবাসীদের সবচেয়ে বড় উৎসব। তাই বাস কর্মীরা ছুটি নিয়েছেন। মঙ্গলবার থেকে ধীরে ধীরে পরিষেবা স্বাভাবিক হবে।’’ ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের নকাট এলাকার এক ইকো হোম স্টের মালিক শুভাশিস দেবসিংহও বলছেন, ‘‘বছরের বড় উৎসবে কর্মীদের ছুটি দিতেই হয়। আমি আর একজন কর্মী মিলে অতিথিদের পরিষেবা দিচ্ছি।’’
এদিন বেলপাহাড়িও ছিল কার্যত ফাঁকা। বেলপাহাড়ির ইন্দিরা চকের একটি খাবারের হোটেলে পর্যটকদের ভিড় ছিল। ওই হোটেলের মালিক বিধান দেবনাথ ও তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রাণী নিজেরাই খাবার পরিবেশন করছিলেন। বিধান বলেন, ‘‘৬ জন কর্মীর সবাই ছুটি নিয়েছেন। তাই রান্নার দায়িত্বে ছিল ইন্দ্রাণী। পরে দু’জনে মিলে খাবার পরিবেশন করেছি।’’ হোটেলের কাউন্টার সামলাতে দেখা যায় বিধান-ইন্দ্রাণীর স্কুল পড়ুয়া খুদে মেয়ে ঋষিকাকে। বর্ধমানের কালনার যুবক রমেন দাস বাইকে বন্ধুদের সঙ্গে বেলপাহাড়ি বেড়াতে এসেছেন। রমেন বলছেন, ‘‘মকর পরবে সবাই বাড়িতে আনন্দ করছেন। পথে লোকজন প্রায় নেই। এমন উৎসবের আবহে বেড়াতে আসাটা বাড়তি পাওনা।’’
কাঁকড়াঝোরের বাসিন্দা হিমাংশু সিং বলেন, ‘‘পরবের দিনে সবাই যে যার বাড়িতে আনন্দ করেন।’’ কাঁকড়াঝোরের সরকারি অতিথি নিবাস যাওয়ার রাস্তার মোড়ে খাবারের দোকান চালান চৈতন সিং ও তাঁর স্ত্রী আরতি সিং। দোকানে খাবার বানানো হয়নি এদিন। দুপুরে ময়দা মেখে স্থানীয় মিষ্টি ‘চৌকা’র লেই বানাচ্ছিলেন চৈতন। জানালেন, মঙ্গলবার এলাকার টুসুমেলায় বিক্রির জন্য চৌকা তৈরি করে রাখছেন। দোকানে অন্য খাবার এদিন বানানো হয়নি।
এদিন বিকেলে বিভিন্ন গ্রামে টুসু নিয়ে মহিলার দল ‘মাঙনে’ বেরোন। ভুলাভেদার মংলি সর্দার, পারুল সর্দার, চঞ্চলা মাহাতোরা জানালেন, বছরে এই একটা দিনেই বাড়ি-বাড়ি গিয়ে টুসু গানের বিনিময়ে চাল, আনাজ, টাকা সংগ্রহ করার পর তাই দিয়ে পাড়ায় পাড়ায় বনভোজন হয়। আজ, মঙ্গলবার পয়লা মাঘ দিনটি 'আখ্যান যাত্রা'। দিনটি যে কোনও শুভ কাজের জন্য প্রশস্ত। আজ গ্রাম দেবতার পুজো-সহ নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হবে।