দূষণ: বাজারে চলছে পলিথিন। নিজস্ব চিত্র
পলিথিন-থার্মোকলে আটকে যাচ্ছে নিকাশি নালার মুখ। বৃষ্টি হলেই নালার জলে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা। তবু ঝাড়গ্রাম শহরে প্লাস্টিক ব্যবহারে কমতি নেই। বাজার করা থেকে জঞ্জাল ফেলা— সবই হচ্ছে পলিথিন ব্যবহার করে। সঙ্গে দোসর থার্মোকলের থালা-বাটি। যে কোনও বাড়িতে অনুষ্ঠানের পর এই থালা-বাটি ফেলা হচ্ছে নালায়।
ঝাড়গ্রাম শহরের কয়েকটি পাইকারি দোকান থেকে প্লাস্টিক, পলিথিন ব্যাগ ও থার্মোকলের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়। পাইকারি দোকানগুলি থেকে পলিব্যাগ কেনে অন্য দোকানগুলি। শহরে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান রয়েছে। এর মধ্যে মাছ, মাংস, কাঁচা আনাজ, চাল-ডাল-মশলাপাতি, মনোহারি জিনিসপত্রের প্রায় তিন হাজার দোকানে প্রতিদিন ক্রেতাদের পলিব্যাগে জিনিসপত্র দেওয়া হয়। ফলে, প্রতিদিন ওই সব দোকানগুলি থেকে যে পরিমাণ পলিব্যাগ অরণ্যশহরে ছড়িয়ে যাচ্ছে তা রীতিমতো উদ্বেগের বলেই মানছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
পুরসভা সূত্রে খবর, বছর দেড়েক আগে পুরসভার জনস্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে পলিথিন ব্যাগ ও থার্মোকল ব্যবহার্য সামগ্রীর ৮টি পাইকারি দোকানকে চিহ্নিত করে মালিকদের নোটিস দেওয়া হয়। পলিথিন ব্যাগ ও থার্মোকলের বদলে বড় কাগজের ব্যাগ, পাটের ব্যাগ শালপাতার থালা-বাটি বিক্রির পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। শহরের ১৮টি ওয়ার্ডে মাইকে প্রচার করে সব মহলকে সচেতনও করা হয়। তারপরও পলিব্যাগ-সহ দুষণকারক সরঞ্জামের যথেচ্ছ ব্যবহার ঠেকানো যায়নি। পরিস্থতি সামাল দিতে গত বছর উপ-পুরপ্রধান শিউলি সিংহের নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪০টি দোকান-কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করা হয়। যদিও তারপরও শহরের দোকানগুলিতে রমরমিয়ে পলিব্যাগের ব্যবহার চলছে।
পলিব্যাগের ব্যবহার কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলছেন শহরের একাংশ বাসিন্দা। শহর থেকে মাত্র চোদ্দো কিলোমিটার দূরে জামবনির চিল্কিগড়ে কনকদুর্গা মন্দির চত্বরে প্লাস্টিক, পলিথিন ব্যাগ ও থার্মোকল সামগ্রীর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে স্থানীয় ব্লক প্রশাসন। আইন ভাঙলে কড়া জরিমানার ব্যবস্থাও রয়েছে সেখানে। অথচ পর্যটন শহর ঝাড়গ্রামে পলিথিন ব্যাগের উপর লাগাম পরাতে পারেনি পুরসভা। পুরসভার সাফাই, পলিথিন ব্যাগ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হলে উপযুক্ত নজরদারিও প্রয়োজন। সেই নজরদারি চালানোর মতো পরিকাঠামো পুরসভার নেই। এ ব্যাপারে ঝাড়গ্রাম পুরসভার উপ-পুরপ্রধান শিউলি সিংহ বলেন, “শহরকে পলিথিন ও প্লাস্টিক মুক্ত করার জন্য সব মহলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবাই সচেতন না হলে শুধু লোকদেখানো নিষেধাজ্ঞা জারি করে কোনও লাভ নেই।”