খড়্গপুরে এ ভাবেই চলে জল ‘চুরি’। নিজস্ব চিত্র
পাম্প বসিয়ে টাইম কল থেকে পাইপে জল উঠে যাচ্ছে ছাদের ট্যাঙ্কে। ফল, এলাকার বাকি কলে জল পড়ছে সুতোর মতো। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প়ড়শিরা। খড়্গপুরে এ ভাবেই জল ‘চুরি’ চললেও নজর নেই কারও।
কী ভাবে চলছে জল ‘চুরি’?
নিয়ম অনুযায়ী, টাইম কলের জল প্রথমে রিজার্ভারে জমিয়ে সেখান থেকে পাম্পের মাধ্যমে ট্যাঙ্কে তোলা উচিত। যদিও টাইম কলের মুখেই পাইপ লাগিয়ে সরাসরি পাম্পের মাধ্যমে জল তোলা হচ্ছে ট্যাঙ্কে। ফলে এলাকার মূল পাইপ লাইনে জলের চাপ কমে যাওয়ায় অন্য বাড়িতে জল পড়ছে সুতোর মতো। সমস্যা সবচেয়ে বেশি শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে।
খড়্গপুরের নিমপুরার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গামন্দির সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক হারাধন পাত্রের অভিযোগ, “এলাকায় জলের সমস্যা সারা বছর থাকে। তার উপরে বাড়ির কলগুলি থেকে পাইপ লাগিয়ে পাম্পের মাধ্যমে জল চুরি হচ্ছে। ফলে পাড়ার কলগুলিতে সুতোর মতো জল পড়ছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘অধিকাংশ বাড়িতে রিজার্ভার না থাকলেও টাইম কল থেকে সরাসরি পাইপের মাধ্যমে ছাদের ট্যাঙ্কে জল ভরা হচ্ছে। এ সব বন্ধে পুরসভার কোনও ভূমিকা দেখি না।” খরিদার বাসিন্দা চৈতালি পালেরও অভিযোগ, “এলাকার অনেক বাড়িতেই কলের মুখে পাম্প লাগিয়ে জল টেনে নেওয়া হচ্ছে। আর আমরা যাঁরা এ সব করিনা তাঁদের ভুগতে হচ্ছে।”
গরম পড়়লে এমনতিতেই খড়্গপুর শহরে জলকষ্ট বাড়ে। জল ‘চুরি’র পাশাপাশি শহরে একাধিক অবৈধ পানীয় জলের সংযোগ থাকায় সমস্যা আরও বাড়ে বলে অভিযোগ। পুরসভা সূত্রে খবর, প্রতিটি ওয়ার্ডে গড়ে গড়ে ২০টি করে অবৈধ পানীয় জলের সংযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরসভায় আবেদন না করেই বহু বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে বৈধ সংযোগ রয়েছে এমন বাড়িতে সুতোর মতো জল পড়ছে বলে অভিযোগ।
সমস্যার কথা স্বীকার করছেন কাউন্সিলররাও। সকলেই পুর কর্তৃপক্ষকেই দুষছেন। খড়্গপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর স্মৃতিকণা দেবনাথ বলেন, “এলাকায় জল সঙ্কট একটা বড় সমস্যা। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই জল চুরির প্রবণতা রয়েছে। এ বিষয়ে বারবার পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারপরেও কারও কোনও হেলদোল নেই।” একই বক্তব্য ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর চন্দন সিংহেরও। তাঁর অভিযোগ, “ওয়ার্ডের দু’একটি এলাকায় জলের সঙ্কট রয়েছে। এই নিয়ে যখনই পুরসভার বৈঠকে বলেছি, তখনই বলা হয়েছে এলাকায় অবৈধ সংযোগ রয়েছে। পাম্প লাগিয়ে জল চুরি হচ্ছে। পুরসভার জল বিষয়ক দফতর এ বিষয়ে তদন্ত করুক। আমিও সহযোগিতা করব।”
চাপের মুখে পড়ে এ বার নড়েচড়ে বসেছে পুরসভার জল বিষয়ক দফতর। জল ‘চুরি’ রুখতে বাড়ি-বাড়ি অভিযান চালানো হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। পুরসভার জল বিষয়ক পুর পারিষদ তৈমুর আলি খান বলেন, “পুরসভা এলাকায় জল চুরির প্রবণতা রয়েছে। আমার ওয়ার্ডেও জল চুরি হচ্ছে। তবে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে চুরির প্রবণতা বেশি। সমস্যা রোধে ইতিমধ্যেই সমীক্ষা চালাচ্ছি। যাঁদের নাম উঠে আসছে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে অভিযান চালানো হবে।”