বিদায়বেলায়: মণ্ডপে সিঁদুরখেলা। মেদিনীপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
নিয়মমাফিক পুজো শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জগদ্ধাত্রীর মণ্ডপে ভিড় ফুরোচ্ছে না। মঙ্গলবার, একাদশীর সন্ধেতেও মেদিনীপুরের পঞ্চুরচকের মণ্ডপের ঠাসা ভিড়। অলিগঞ্জের ছবিও দেখেও বোঝা ভার মায়ের এ বার বিদায়ের পালা।
অগ্নিকন্যা ক্লাবের উদ্যোগে পঞ্চুরচকে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী বলছিলেন, “এদিনও অনেকে প্যান্ডেলে এসেছেন। প্যান্ডেলের ভিড় দেখে বোঝার উপায় ছিল না দিনটা নবমী না একাদশী!” শুধু পঞ্চুরচক কিংবা অলিগঞ্জ নয়, সিপাইবাজার থেকে কর্ণেলগোলা, বটতলাচক থেকে মিরবাজার- একাদশীর দিনেও ভিড় হয়েছে সর্বত্র। বিকেল হতে ঠাকুর দেখা শুরু হয়। সন্ধ্যা হতে ভিড় জমতে শুরু করে প্যান্ডেলে, প্যান্ডেলে। পুজোর শেষ গন্ধটুকু যে চেটেপুটে নিতে হবে! একাদশীর এই ভিড়ের একটা কারণ বৃষ্টি। বৃষ্টির জেরে অনেকেই নবমীতে বেরোতে পারেননি। ওই দিন শহর-শহরতলিতে বৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বেরিয়েও হাতেগোনা কয়েকটি ঠাকুর দেখে বাড়ি ফিরেছেন। দশমীর সন্ধ্যায় ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন নমিতা সামন্ত। নমিতাদেবীর কথায়, “শুনেছিলাম, মেদিনীপুরে এ বার ভাল পুজো হচ্ছে। তাই বেরিয়ে পড়ি। বেশ কয়েকটা মণ্ডপে গিয়েছি। আলোকসজ্জা বেশ ভাল লেগেছে। প্রতিমার সাজও নজরকাড়া ছিল।”
প্রায় সব জগদ্ধাত্রী পুজোতেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। দশমীর সন্ধ্যায় ক্ষুদিরামনগরের আবির্ভাব ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। অলিগঞ্জে, কর্নেলগোলার নবীন-প্রবীণ সম্প্রদায়ের পুজোতেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অলিগঞ্জ সর্বজনীনে অন্নভোগ বিতরণ হয়েছে। অন্নভোগ খেতে অনেকে আসেন। পুজো কমিটির সভাপতি সুকুমার পড়্যা বলছিলেন, “পুজোর দিনগুলোয় নানা আয়োজন ছিল।’’ তাঁর কথায়, “এই পুজো আমাদের সকলের। অনেকে পুজো দেখতে এসেছেন। পুজোর দিনগুলোয় ভাল ভিড়ও হয়। এদিনও অনেকে এসেছেন। পুজো সকলের ভাল লেগেছে। এটাই প্রাপ্তি।’’
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। দুর্গাপুজো, কালীপুজোর পর জগদ্ধাত্রীপুজো ঘিরে উত্সবমুখর হয়েছে শহর। পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়ে গিয়েছিল সেই পঞ্চমী থেকে। একাদশীতেও যেন উত্সবের রেশ কাটতে চায়নি। মেদিনীপুরে এখন সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা বেড়েছে। দর্শকদের নজর কাড়তে সকলেই পুজোর আয়োজনে নতুন কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কোথাও থিমের মণ্ডপ তৈরি হয়। কোথাও পুজো মণ্ডপের আশেপাশে আলোর রোশনাইয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয়। চন্দননগরের আলো দিয়ে এলাকা সাজানো হয়। কোথাও আবার প্রতিমায় থাকে নজরকাড়া সাজ।
ছবিটা এ বারও এক ছিল। সেই ষষ্ঠী থেকেই আলোর সাজে সেজে উঠতে শুরু করে শহর। মিরবাজার থেকে কর্নেলগোলা, অলিগঞ্জ থেকে পাহাড়িপুর-সর্বত্রই আলোর ঝলকানি চোখে পড়ে। চোখে পড়ে পুজোর জাঁকজমকও। চলতি সপ্তাহে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুজোর রেশ থাকবে। পুজো ঘিরে বিচিত্রানুষ্ঠান রয়েছে। কর্নেলগোলার নবীন-প্রবীণ সম্প্রদায়ের পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা শঙ্কর মাঝি বলছিলেন, “পুজো যেন শেষ হয়েও শেষ হতে চাইছে না!”