লজঝরে কাঠের সাঁকো থেকে মুক্তি চায় লক্ষ্যাটাপোল

কাঠের সাঁকোই সব থেকে বড় যন্ত্রণা। আর তা থেকেই দ্রুত মুক্তি চান গড়বেতার লক্ষ্যাটাপোলের বাসিন্দারা।শিলাবতীর উপর ওই লজঝরে ‘ফেয়ার ওয়েদার’ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই মোটরবাইক ও সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে জখম হন।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

গড়বেতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০২:২৮
Share:

ঝুঁকি: নড়বড়ে কাঠের সাঁকো দিয়েই চলেছে বাইক। নিজস্ব চিত্র

কাঠের সাঁকোই সব থেকে বড় যন্ত্রণা। আর তা থেকেই দ্রুত মুক্তি চান গড়বেতার লক্ষ্যাটাপোলের বাসিন্দারা।

Advertisement

শিলাবতীর উপর ওই লজঝরে ‘ফেয়ার ওয়েদার’ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই মোটরবাইক ও সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে জখম হন। কয়েক বছর আগে সাঁকো থেকে পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। বর্ষাকালে নদীতে জল বাড়লে সাঁকোটি ভেসে যায়। তখন চরম সমস্যায় পড়েন নদীর দু’প্রান্তের গোটা কুড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। লক্ষ্যাটাপোলের ওই সাঁকো পেরিয়ে সহজে হুগলির কামারপুকুর ও আরামবাগ যাওয়া যায়। পড়শি জেলার সঙ্গে সংযোগকারী ওই রুটে স্থায়ী সেতু তৈরির দাবি দীর্ঘদিনের। সেতু তৈরির জন্য একাধিক বার মাটি পরীক্ষাও হয়েছে। কিন্তু তারপর আর কাজ এগোয়নি।

পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা-১ ব্লকের খড়কুশমা পঞ্চায়েতের মোংলাপোতা আর শ্যামনগর পঞ্চায়েতের লক্ষ্যাটাপোলের মাঝ দিয়ে বয়ে গিয়েছে শিলাবতী। ভারী বৃষ্টি হলেই আপাত শান্ত এই নদীই হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর। সাঁকো ভেসে তখন পারাপারের ভরসা কেবল নৌকো। কিন্তু নৌকোয় ভারী মালপত্র নিয়ে যাওয়া যায় না। তখন লক্ষ্যাটাপোল, রয়েন, বাহাদুরপুরের মতো গ্রামের বাসিন্দারা চরম সমস্যায় পড়েন।

Advertisement

ওই সব গ্রাম থেকে নদী পেরিয়ে মোংলাপোতা হয়ে গড়বেতা-১ ব্লক সদর, ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল এবং নিকটবর্তী বাজারহাটে পৌঁছতে সুবিধা হয়। বর্ষায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে প্রায় ৭-৮ কিমি ঘুরপথে যেতে হয়। মোংলাপোতার দিক থেকে সেতু পেরিয়ে লক্ষ্যটাপোল হয়ে কামারপুকুর যাওয়া যায়। অনেকেই কম দূরত্বের জন্য ওই রাস্তাটি ব্যবহার করেন।

লক্ষ্যাটাপোল গ্রামের সুমন প্রামাণিক গড়বেতা কলেজের ছাত্র। সুমন বলেন, ‘‘বর্ষাকালে ঘুরপথে কলেজ যেতে খুবই সমস্যা হয়।’’ লক্ষ্যাটাপোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ মাজি জানালেন, বর্ষায় পড়ুয়ারা স্কুলে আসতে চায় না। বিদ্যুৎবাবু এবং সহ-শিক্ষক শুভজিৎ সাঁতরার মোংলাপোতার দিক থেকে স্কুলে আসতেও প্রচুর ভোগান্তি হয়। নদীর পাড়ে মোটর বাইক রেখে নৌকোয় স্কুলে যেতে হয়। লক্ষ্যাটাপোলের বেশ কিছু পড়ুয়া নদী পেরিয়ে মোংলাপোতা হাইস্কুলে পড়তে যায়। বর্ষায় সমস্যায় পড়ে তারাও।

এলাকার কয়েকজন সম্পন্ন ব্যক্তি মিলে গড়বেতা-১ পঞ্চায়েত সমিতিকে বার্ষিক রাজস্ব দিয়ে ‘ফেয়ার ওয়েদার’ কাঠের সাঁকো তৈরির বরাত পান। সাঁকো ব্যবহারকারী সাইকেল, বাইক ও গাড়ির আরোহীদের থেকে ‘টোল’ আদায় করা হয়। এলাকার বড় পাইকারি সব্জি বাজার রয়েছে আমলাগোড়ায়। লক্ষ্যাটাপোল, রয়েন, বাহাদুরপুর গ্রামের সব্জি চাষিরা সাঁকো পেরিয়ে মোংলাপোতা হয়ে আমলাগোড়ার বাজারে সব্জি বেচতে যান। বর্ষাকালে সেতু ডুবে গেলে খুবই সমস্যা হয় চাষিদেরও।

গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী অবশ্য বসলেন, “লক্ষ্যাটাপোলে কংক্রিটের সেতু তৈরির জন্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের কাছে বরাদ্দ চেয়েছি। প্রয়োজনীয় সমীক্ষার কাজ হয়েছে। টাকা বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হবে।’’

আপাতত সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন এলাকাবাসী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement