খড়্গপুরের মঞ্চে শান। নিজস্ব চিত্র।
শহরে অনুষ্ঠান করতে এসে মশার উপদ্রবে নাজেহাল হয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী শান। মঞ্চেই সে কথা বলেছেন তিনি। তারপর থেকে খড়্গপুর শহর জুড়ে চলছে মশা-চর্চা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় শানের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন খড়্গপুরের উপ-পুরপ্রধান শেখ হানিফ। তিনি দাবি করেছিলেন, শান যেগুলিকে মশা বলছেন, সেগুলো আসলে শ্যামাপোকা। উপ-পুরপ্রধানের এই ব্যাখ্যা নিয়ে রবিবার দিনভর জল্পনা চলেছে। শহরের অনেক বাসিন্দাই পাল্টা বলছেন, ‘‘যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নিই শানকে শ্যামাপোকা কামড়েছিল, কিন্তু আমাদের তো দিন-রাত মশার কামড় সহ্য করতে হচ্ছে!’’ পরিস্থিতি দেখে এ দিন ঢোঁক গিলেছেন উপ-পুরপ্রধানও। তিনি বলেন, “সে দিন মঞ্চের আলোয় অধিকাংশই শ্যামাপোকা ছিল। তাই বলে আমি বলছি না যে মশা কামড়াতে পারে না।’’
তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘শহরে আগের তুলনায় মশার উপদ্রব অনেক কমেছে। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। স্প্রে, ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। সমীক্ষাও চলছে।’’
শহরবাসীর অবশ্য অভিযোগ, নিয়মিত অভিযান হচ্ছে না। ফলে, ইন্দা, ভবানীপুর, সুভাষপল্লি, খরিদা, শ্রীকৃষ্ণপুর, মালঞ্চ, ঝাপেটাপুর, কৌশল্যা, সাঁজোয়াল, তালবাগিচা, আয়মা, নিমপুরার মতো এলাকায় মশার উপদ্রব যথেষ্ট। শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খড়্গপুর কলেজের শিক্ষিকা সোমালি নন্দী বলেন, “শান তো একদিন মশার কামড় সহ্য করেছেন। আমরা তো রোজ মশার কামড় খাচ্ছি। বারবার কাউন্সিলরকে বলেও সুফল পাইনি। পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধানরা কোনও দিন এলাকায় ঘোরেন না। শুধু বলে দেন, মশা নিধনে অভিযান চলছে।” যেখানে শানের অনুষ্ঠান ছিল সেই তালবাগিচা হাসপাতাল ময়দানের পাশেই বাড়ি বেণু চক্রবর্তীর। তিনিও বলেন, “শানের কথা একদম ঠিক। সন্ধ্যার পরে মশার জ্বালায় টেকা যায়না। মাঠ পরিচ্ছন্ন হলেও আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় জল জমছে। বাজারে আবর্জনা জমছে। ফলে মশা বাড়ছে।’’
গত বছর রেলশহরে কামড় বসিয়েছিল ডেঙ্গি। তারপরে অভিযান গতি পেয়েছিল। কিন্তু এ বার ডেঙ্গি তেমন ছড়ায়নি। ফলে, অভিযানে ভাটা পড়েছে বলে অভিযোগ। পুজোর আগে তৎপরতা আরও কমেছে বলেও শহরবাসীর দাবি। শান মশার উপদ্রবের কথা বলার পরে জেলা থেকে পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল। তবে রবিবার ছুটির দিনে তাঁরা আসেননি। পশ্চিম মেদিনীপুরের মশাবাহিত রোগের নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “মঙ্গলবার নাগাদ আমি পতঙ্গ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ওই এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করব। ডেঙ্গির মশা না থাকলেও কিউলেক্স মশা থাকতেই পারে। সে ক্ষেত্রে এনসেফ্যালাইটিস, গোদের মতো রোগ হতে পারে। অনুষ্ঠানের আগে যদি মঞ্চের আশেপাশে একবার ধোঁয়া দেওয়া হত তাহলে আশা করি এত সমস্যা হত না।’’