সবসময় সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনা। তাই রোগীকে নিয়ে যাতায়াতে ভরসা ভাড়ার গাড়ি। — নিজস্ব চিত্র।
সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স সাকুল্যে দু’টি। তার মধ্যেও একটি খারাপ। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বেশিরভাগ সময় বেশি টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া নিতে হয়। নির্দিষ্ট ভাড়ার কোনও বালাই নেই। অনেক ক্ষেত্রে পরিজনেরা অনেক বেশি টাকা দিয়েই রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বাধ্য হন বলে অভিযোগ। গাড়ির দালাল চক্রে রাশ টানতে নজর নেই কারও।
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে গেলেই চোখে পড়বে, জরুরি বিভাগের সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একাধিক গাড়ি। অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বরে গাড়ি ব্যবসার ফাঁদ পেতে বসেছেন শহরের কিছু ভাড়া গাড়ির চালক। আর এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই চলছে দালালরাজ। চড়া ভাড়া নিয়ে রোগীকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব জেনেও নীরব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার সকাল ১০টা। অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের জন্য জরুরি বিভাগ থেকে এক রোগীকে বের করছিলেন পরিজনেরা। সঙ্গে সঙ্গেই একজন এসে রোগীর পরিজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘“গাড়ি লাগবে?” প্রশ্ন শুনে ওই ব্যক্তি মাথা নাড়তেই তিনি এক গাড়ির চালককে ডাকলেন। রোগী নিয়ে ১৬ কিলোমিটার রাস্তা যাওয়ার জন্য বারোশো টাকা দাবি করলেন গাড়ির চালক। দর-দাম করতেই এগিয়ে এলেন আরও চার জন গাড়ি চালক। প্রত্যেকেই ওই একই ভাড়া দাবি করলেন। শেষমেষ সাড়ে এগারোশো টাকা ভাড়ায় রোগীকে নিয়ে যেতে বাধ্য হলেন তাঁরা।
রোগীর পরিজনেদের দাবি, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি এড়িয়ে অন্যত্র গাড়ি ধরতে গেলেও নানা ভাবে সমস্যায় পড়তে হয়। হাসপাতালের কয়েকজন কর্মীদের মধ্যে দালাল থাকায় বিপাকে পড়তে হয় বলে রোগীর পরিজনেদের অভিযোগ। কেশিয়াড়ির বাসিন্দা এক রোগীর পরিজন দুলাল হেমব্রমের অভিযোগ, “যখনই হাসপাতালে আসি এ ভাবেই গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। বাইরে থেকে গাড়ি নিয়ে এসে রোগী নিয়ে যেতে গেলে ওই গাড়ির চালকেরা ঝামেলা করে।’’ তাঁর আরও অভি
যোগ, ‘‘এর পিছনে হাসপাতালের মধ্যেই কিছু দালাল চক্রের কারসাজি রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদাসীন থাকায় বাধ্য হয়ে সব মেনে নিতে হচ্ছে।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালের দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সের একটি দীর্ঘদিন খারাপ হয়ে রয়েছে। অস্থায়ী চালক দিয়ে চালাতে হচ্ছে অন্য অ্যাম্বুল্যান্সটিও। সমস্যা সমাধানে এক সময় আশঙ্কাজনক রোগীকে নিয়ে যেতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে একটি গাড়ি চালককে বরাত দেওয়া হয়। কিন্তু সেই গাড়ির বকেয়া প্রায় ৬ লক্ষ টাকা সরকার থেকে না মেলায় রোগী পরিবহণ বন্ধ করে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যত্র রোগী নিয়ে যেতে হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুল্যান্সই রয়েছে। এখন বরাত জোরে হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স পেলে ভাল। নয়তো খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যেতে ভরসা ভাড়া গাড়িই।
হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতাল চত্বরে ভাড়ার গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে, এটা ঠিক। এ নিয়ে মৌখিক ভাবে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সের একটি খারাপ। ফলে রোগীরা সবসময় অ্যাম্বুল্যান্সের সুবিধা পান না। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যেতে ওই গাড়িগুলিই ভরসা। তাই পুলিশ লিখিত অভিযোগ দাবি করলেও দিতে পারিনি।” যদিও জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, “হাসপাতালের মধ্যে এ ভাবে গাড়ি রাখা যায় না। আমার বিষয়টি জানা নেই। এ নিয়ে খোঁজ নেব। প্রয়োজনে দ্রুত পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ জানাব।”