কোথাও পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, আবার কোথাও চিকিৎসক থাকলেও মেলে না পরিষেবা— সরকারি হাসপাতাল নিয়ে অভিযোগ বিস্তর। চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগে প্রায়ই সরব হন রোগীর পরিজনেরা। এ বার ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের বেহাল অবস্থা নিয়ে সরব হলেন খোদ শাসক দলের কাউন্সিলর কল্লোল তফাদার। হাসপাতালের খারাপ অবস্থার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কল্লোলবাবু। চিঠি পেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের চিঠি পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনও।
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের চিঠির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনীকুমার মাঝিকে চিঠি পাঠিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। চিঠিতে জেলা হাসপাতালের উন্নতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অশ্বিনীবাবু বলেন, “জেলাশাসকের চিঠি পেয়েছি।” তাঁর বক্তব্য, “হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের সব রকম চেষ্টা চলছে। নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হয়।”
জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে কল্লোলবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি নালিশ জানান, ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের পরিষেবা তেমন উন্নত নয়। ইসিজি, ইউএসজি প্রভৃতি পরিষেবা সব দিন মেলে না বলেও নালিশ করেন তিনি। পাশাপাশি জানিয়ে দেন, বেশ কিছু ওষুধপত্রও হাসপাতালে থাকে না। চিঠি পেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্দেশ মতো মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে চিঠি আসে জেলাশাসকের দফতরে। এরপরেই হাসপাতালের উন্নতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশেষ করে ইসিজি, ইউএসজি এবং ওষুধপত্রের বিষয়টি দেখতে বলা হয়। হাসপাতালের এক কর্তাও মানছেন, “মাঝেমধ্যে কিছু ওষুধের ‘স্টক’ শেষ হয়ে যায়। তখন সমস্যা হয়।”
দিন কয়েক আগেই ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে এক অন্তঃসত্ত্বা বধূর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে অন্য অভিযোগও রয়েছে। সপ্তাহে মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার হাসপাতালে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি (ইউএসজি) করা হয়। ফলে, সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন বহির্বিভাগের রোগীরা। কারণ, বহির্বিভাগে প্রতি সপ্তাহের ওই তিন দিনে সর্বোচ্চ দশ জন করে মোট ত্রিশ জনের ইউএসজি করা হয়। বহির্বিভাগে ইউএসজি করানোর জন্য রোগীদের ভিড় বেশি হয়। গড়ে দেড়-দু’মাস পরে রোগীদের পরীক্ষার দিন ধার্য্য করা হয় বলে অভিযোগ। এরফলে, অনেক রোগীই বাইরে থেকে ইউএসজি করাতে বাধ্য হন। এ ছাড়া, রাতের বেলায় অন্তর্বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগীদের ইউএসজি, ইসিজি-সহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই।
হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসকের একটি বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্র রয়েছে। রাতবিরেতে চিকিৎসাধীন রোগীদের ইউএসজি ও ইসিজি করার প্রয়োজন হলে ভরসা সেই বাইরের কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রে মোটা টাকা ফেললেই মেলে পরিষেবা। জেলা হাসপাতালে আসা রোগীর আত্মীয় কুনারাম মাণ্ডি, বেলমণি বাস্কেদের কথায়, “ঝাড়গ্রাম জেলা তথা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের সুগার, ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন-র মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলো বাইরের প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে কেন করে আনতে হবে? তাহলে সরকারি হাসপাতাল থেকে লাভ কী?” রোগীর পরিজনদের বক্তব্য, “এ কেমন জেলা হাসপাতাল, যেখানে সামান্য ব্লাডসুগার পরীক্ষাটুকুও হয় না!”
জেলার এক স্বাস্থ্য- কর্তাও মানছেন, “পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। রোগীদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেই দিকটি গুরুত্ব দিয়েই দেখা হয়।” তিনি বলেন, “জেলাশাসকের নির্দেশ মতো কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” কী পদক্ষেপ করা হয়, কবে এই হাসপাতালের পরিষেবার মান বদলায়, সেটাই দেখার!
তৃণমূল কাউন্সিলর কল্লোলবাবুর অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সকলের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। যা পরিকাঠামো রয়েছে, তা দিয়ে যথেষ্ট ভাল পরিষেবা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু কর্তৃপক্ষের একাংশের গাফিলতির জন্য রোগীরা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘হাসপাতালের প্রকৃত ছবির কথা জানাতেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালকে রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছি।’’