বেলপাহাড়ি থানার সামনে সিপিএমের বিক্ষোভ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
এক যুগ পর এ যেন উলট পুরাণ!
রাজ্যের ক্ষমতায় এখন তৃণমূলের সরকার। পঞ্চায়েত ভোটের আগে জঙ্গলমহলে সক্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছে সিপিএম। এমন আবহে সিপিএমের তরফে অভিযোগ উঠেছে, বেছে বেছে তাদের দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুরনো মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই সব অভিযোগ তুলে সোমবার সিপিএমের বেলপাহাড়ি এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে মিছিল করে বেলপাহাড়ি থানার সামনে অবস্থান করা হল। পরে এসডিপিও (বেলপাহাড়ি) উত্তম গরাঁই ও বেলপাহাড়ি থানার আইসি বিশ্বজিৎ বিশ্বাসকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বিনপুরের প্রাক্তন বিধায়ক দিবাকর হাঁসদা, দলের বেলপাহাড়ি এরিয়া কমিটির সম্পাদক ধর্মদাস সর্দার, পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সিপিএম সভাপতি হাঁড়িরাম সিং ও প্রবীণ নেতা দুর্গা সিংয়ের নেতৃত্বে ওই কর্মসূচি হয়।
সিপিএমের মিছিল ও জমায়েত থেকে ধৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি তোলা হয়। পরে দিবাকর-সহ দলের চার প্রতিনিধি পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি জমা দেন। থানার বাইরে অবস্থানে বসেন সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা। সিপিএমের তরফে এ দিন অভিযোগ করা হয়, মাস খানেক আগে বেলপাহাড়ির গিদিঘাটি গ্রামের বাসিন্দা এক সিপিএম কর্মীকে মাদক মামলায় অভিযুক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে গত বছরের পুরনো একটি খুনের মামলায় সম্প্রতি আরও তিনজনকে অভিযুক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। দিবাকর বলছেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধৃতদের নাম এফআইআর-এ নেই। পরিকল্পিত ভাবে দলের কর্মী-সমর্থকদের মামলায় জড়িয়ে দিয়ে ভোটের আগে জেলে পুরে রাখা হচ্ছে।’’
জঙ্গলমহল একসময়ে ছিল বামেদের লালদুর্গ। সেই সময়ে পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া ও নানা মামলায় ধরপাকড় করার অভিযোগ উঠত বারে বারে। কখনও কংগ্রেস, কখনও তৃণমূল এই অভিযোগ করত। বাম আমলেও এই ধরনের অভিযোগে বেলপাহাড়ি থানা ঘেরাও কর্মসূচি করেছিল তৎকালীন বিরোধীদলগুলি। জেলা কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল বলছে ‘খেলা হবে’। পুলিশকে দিয়ে সেই খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে।’’
বিজেপির জেলা সহ সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলছেন, ‘‘ক্ষমতায় থাকার সময় বিরোধী দমনে সিপিএম যা করত, এখন ক্ষমতায় থেকে তৃণমূল সেই একই কায়দায় পুলিশকে ব্যবহার করে বিরোধী-দমন করছে। আমাদের কর্মীদেরও বিভিন্ন সময় মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘জঙ্গলমহলের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আছেন। পরাজয় নিশ্চিত বুঝেই এখন থেকেই বিরোধীরা ভিত্তিহীন অভিযোগ করতে শুরু করেছে।’’ এসডিপিও (বেলপাহাড়ি) উত্তম গরাঁই বলেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে গ্রেফতার করা হয়। এখানে পক্ষপাতিত্বের কোনও প্রশ্নই নেই। ওঁরা স্মারকলিপি দিয়েছেন।’’