Oppression of TMC Leader

দল তাড়ালেও প্রভাব কমেনি শুকচাঁদের

স্থানীয় সূত্রের খবর, শাসক দলের হয়ে এলাকায় দাপট দেখাত শুকচাঁদ। গত পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত এলাকায় সক্রিয় তৃণমূলের বুথ কর্মী হিসাবে কাজ করেছে।

Advertisement

গোপাল পাত্র

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:৩২
Share:

জয়নগর ও ভূপতিনগরের ঘটনায়, তমলুক শহরে ছাত্র সংগঠনের প্রতিবাদ মিছিল। নিজস্ব চিত্র।

পালাবদলের পরই দল বদলেছিলেন গণপিটুনিতে মৃত অভিযুক্ত শুকচাঁদ মাইতি। কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিয়েছিল তৃণমূলে। ক্রমশ হয়ে উঠেছিল ‘বাহুবলী’। অভিযোগ ছিল বিস্তর। গত লোকসভা ভোটের আগে বুথ কমিটি থেকে শুকচাঁদকে সরিয়ে দেয় তৃণমূল। খুনের ঘটনার পর রবিবার উত্তেজিত জনতা তৃণমূলের ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। এলাকায় গিয়ে মৃত মহিলার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে বিজেপি ও কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল।

Advertisement

২০১১ সালে পালাবদলের পর থেকে রাজ্যের বহু জায়গায় পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দিতে পারেনি বিরোধীরা। যে পঞ্চায়েত এলাকায় এই খুন এবং গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সেটিরও চেহারা ছিল একই। স্থানীয় সূত্রের খবর, শাসক দলের হয়ে এলাকায় দাপট দেখাত শুকচাঁদ। গত পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত এলাকায় সক্রিয় তৃণমূলের বুথ কর্মী হিসাবে কাজ করেছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক কুকর্মের অভিযোগ সামনে আসায় গত লোকসভা ভোটে বুথ কমিটি থেকে সরিয়ে দেয় তৃণমূল। কিন্ত স্থানীয়দের অভিযোগ, তাতে দাপট কমেনি অভিযুক্তের। হয়তো সেই জন্যই নিহত মহিলা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী তথা স্থানীয় অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতির কাছে শুকচাঁদের কুকীর্তির কথা জানালে ওই নেতা তা বলে দিয়েছিলেন মৃত অভিযুক্তকেই।

এই ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। এ দিন দুপুরে কাঁথি সাংগঠনিক বিজেপির জেলা প্রতিনিধি দলের সদস্য ও মণ্ডল নেতৃত্বরা নির্যাতিতা মহিলার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, শাসকদলের ছত্রছায়ায় থাকায় অভিযুক্তেরা কুকীর্তি করার সাহস দেখাচ্ছে গোটা রাজ্যে। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ দাশ বলেন, '‘এই সরকার আসার পর থেকে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। মানুষ কোথাও পুলিশ প্রশাসনের উপর অনাস্থা দেখিয়ে এই গনপিটুনির কাণ্ড ঘটাচ্ছেন বলে মনে হয়। তবে আইন হাতে তুলে নেওয়া উচিত হয়নি।’’ বিকেলে মৃত মহিলার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, মানসকর মহাপাত্র সহ অন্যরা। শুভঙ্কর বলেন, '‘জয়নগরের পরে পটাশপুরে তৃণমূলের ওই হার্মাদ প্রত্যক্ষদর্শী মহিলাকে নির্যাতন করে খুন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী পুজোর উৎসবে ফিরতে বলেছেন। সেই উৎসবের আগে মায়ের দের বিসর্জন হচ্ছে।’’ কাঁথি সাংগঠনিক তৃণমূলের জেলা সভাপতি পীযূষ কান্তি পণ্ডার পাল্টা প্রতিক্রিয়া, '‘তৃণমূলের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির কোন সম্পর্ক নেই। ওই ব্যক্তি পরকীয়া করার ঘটনা দেখে ফেলায় প্রত্যক্ষদর্শী মহিলাকে খুন করেছে। আইন হাতে তুলে নেওয়া বিষয়টি ঠিক হয়নি।’’

Advertisement

দু’সপ্তাহ আগে চোর সন্দেহে এক মহিলাকে বিবস্ত্র করে মহিলাকে বস্তায় ঢুকিয়ে শালিসি সভায় গনপিটুনির দেওয়া নিদান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল নেতা ও এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সিভিক ও তৃণমূল নেতা এখনও অধরা।২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হলদিয়ার ঝিকুরখালি এলাকায় নদীর তীরে মা ও মেয়ের অর্ধদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। মা ও মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। অভিযুক্তরা এলাকায় তৃণমূলের কর্মী হিসাবে পরিচিত ছিল বলে অভিযোগ। ২০২২ সালে খেজুরির বারাতলায় স্কুল ছাত্রী দুই নাবালিকা টিউশন পড়ে বাড়ি ফেরার পথে একজনকে অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু পরে অভিযুক্ত জামিনে ছাড়া পায় বলে অভিযোগ।

চলতি বছরে লোকসভা ভোটের আগে নন্দীগ্রামের সোনাচুড়া মনসা বাজারে বিজেপি সমর্থক এক মহিলাকে ( রথিবালা আড়ি ) খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে কয়েকজন গ্রেফতার হয়। লোকসভা ভোটের পরে গত আগস্ট মাসে নন্দীগ্রামের গোকুলনগর এলাকায় তৃণমূল সমর্থক এক মহিলাকে বিবস্ত্র করে অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় অভিযুক্ত বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। বিরোধীদের অভিযোগ, পুলিশের প্রশয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা অপরাধ করছেন। তারপর তাদের আড়ালও করছে পুলিশ। বিজেপি ও তৃণমূলের তোলা অভিযোগ নিয়ে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের দল অপরাধীদের প্রশয় ও আড়াল করার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এলাকায় সন্ত্রাস ও কাউকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। অপরাধ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement