দেবী: বাড়ির প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
২১২ বছর আগের কথা। তৎকালীন পূর্ববঙ্গে। ঝাড়গ্রামের সেনবাড়িতে কূলদেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো শুরু হয়েছিল। সেই ‘ট্র্যাডিশন’ চলছে এখনও। আগের মতো জাঁকজমক আর নেই। তবে ২০০ বছরেরও বেশি পুরনো এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সেনদের পারিবারিক ঐতিহ্য।
১২১২ বঙ্গাব্দে ময়মনসিংহের আকুয়াপাড়ায় নিজের বাড়িতে পুজো শুরু করেন সম্পন্ন ভূস্বামী রামরতন সেনশর্মা। পারিবারিক পেশা কবিরাজি হলেও রামরতন ছিলেন ময়মনসিংহের মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্যচৌধুরীর দেওয়ান। সেই ঐতিহ্যের পুজো ঠাঁইনাড়া হয় দেশভাগের পরে। রামরতনের উত্তরসূরিরা চলে আসেন ঝাড়গ্রামে। পূর্ববঙ্গে পুজো হতো তিন দিন ধরে। তবে পাঁচের দশকের গোড়ায় ঝাড়গ্রামে শুরু হওয়া পুজোটি এক দিনই হয়। এ বার পুজোর ২১৩তম বর্ষ। পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়, এক সন্ন্যাসীর পরামর্শে পারিবারিক সমৃদ্ধির কামনায় পূর্ববঙ্গে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেছিলেন রামরতন। তাঁর ছেলে রামসুন্দরও ছিলেন ভূস্বামী। রামসুন্দরের ছেলে প্রবোধকুমার সেন ময়মনসিংহের রাজ এস্টেটের ম্যানেজার ছিলেন। দেশভাগের পর পাঁচের দশকে প্রবোধবাবু সপরিবারে চলে আসেন ঝাড়গ্রামে। ঝাড়গ্রামের বাছুরডোবায় নতুন করে তৈরি হয় সেন পরিবারের ভদ্রাসন। ১৯৫৩ সালে তাঁর উদ্যোগে ঝাড়গ্রামের বাড়িতে শুরু হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। আর্থিক সমস্যা সত্ত্বেও পারিবারিক ঐতিহ্যের পুজো ও অনুষ্ঠান বন্ধ হতে দেননি রামরতনের উত্তরসূরিরা। ১৯৮৩ সালে প্রয়াত হন প্রবোধবাবু। এখন পুজোর মুখ্য দায়িত্বে রয়েছেন প্রবোধবাবুর বড় ছেলে ৮০ বছর বয়সী সুবোধ সেন। সুবোধবাবুর ভাইপো দেবব্রত সেন বলেন, “আমরা সবাই মিলে সাধ্য মতো আয়োজনে পুজো চালিয়ে যাচ্ছি।” তিনি আরও জানান, জগদ্ধাত্রীর পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ময়মনসিংহে প্রায় ২০ হাজার টাকা বার্ষিক আয়ের দেবত্র সম্পত্তির রেখে যান রামরতন। দেশভাগ হওয়ার পরে পূর্ববঙ্গের সেই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। ঝাড়গ্রামে আর্থিক সমস্যা সত্ত্বেও পুজো ও বার্ষিক অনুষ্ঠানগুলি বন্ধ হয়নি। পরিবারের প্রবীণ সদস্য সুবোধ সেন, বরুণ সেন, পীযূষ সেনরা জানান, জমিদারের পুজোর সেই জৌলুস আজ ইতিহাস। তাঁরা কেবল সীমিত সাধ্যের মধ্যে ঐতিহ্যের ধারাটিকে টিকিয়ে রেখেছেন।”
এ ছাড়াও অরণ্যশহরে বেশ কয়েকটি সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। এর মধ্যে শহরের হরিতকি তলার বেকার্স পার্লামেন্টের সর্বজনীন পুজোটি নজর কেড়েছে। ১৮তম বর্ষের পুজোর থিম ‘বিশ্ব বাংলায় বিশ্বকাপ’। নবান্নের আদলে মণ্ডপ এবং নৃত্যানুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’ কর্মসূচির প্রচার পুজোর অন্যতম আকর্ষণ।