দুর্ভোগ: রোদ-বৃষ্টি সয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেই বাস ধরতে হয় যাত্রীদের। খড়্গপুরের কৌশল্যা মোড়ে। নিজস্ব চিত্র
চড়া রোদে ছাতা মাথায় বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন গৃহবধূ মাম্পি পাল। বাস আসার আগেই শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর বিপত্তি বাধে তখনই। কারণ, খড়্গপুর বাসস্ট্যান্ডে কোথাও যাত্রী প্রতীক্ষালয় ও শৌচাগার নেই। শেষে পাশের সাইকেল স্ট্যান্ডে গিয়ে বলেকয়ে শৌচাগারে যান মাম্পিদেবী। মেদিনীপুরের এই বধূ বলছিলেন, “আত্মীয়বাড়িতে এসেছিলাম। বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লাম। খড়্গপুরের মতো শহরের বাসস্ট্যান্ডে প্রতীক্ষালয় ও শৌচাগার নেই, ভাবতে পারছি না।”
এই সমস্যায় ভুক্তভোগী খড়্গপুরের বাসযাত্রীদের সকলেই। শুধু শহরের প্রধান বাসস্ট্যান্ড নয়, বাসস্টপগুলিতেও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে কোনও পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। বাসস্টপে হাতেগোনা যে কয়েকটি প্রতীক্ষালয় আছে সেগুলি জীর্ণ। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পুরসভা ও পূর্ত দফতর বহুদিন আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা— সব ঋতুতে খোলা আকাশের নীচে রাস্তায় দাঁড়িয়েই বাসের অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের।
শহরের সৌন্দর্যায়ন ও নিত্যযাত্রীদের সাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে আটের দশকে বেশ কিছু যাত্রী প্রতীক্ষালয় গড়েছিল পূর্ত দফতর ও খড়্গপুর পুরসভা। কথা ছিল সেগুলির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে পুরসভা। গোড়ায় কাজ হলেও ক্রমে পুরসভা দায়িত্ব থেকে দূরে সরে। ফলে, কৌশল্যা, পুরাতন বাজার, ইন্দা মোড়, কমলাকেবিন এলাকায় যাত্রীদের ভোগান্তির অন্ত নেই। কৌশল্যায় বাসের প্রতীক্ষায় থাকা বেলদা আসন্দার বাসিন্দা অশ্বিনী মণ্ডল বলেন, “চোখ দেখাতে চিকিৎসকের কাছে এসেছিলাম। বাস ধরতে এসে দোকানের ছাউনির তলায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। খড়্গপুরের মতো শহরে এত গুরুত্বপূর্ণ বাস স্টপে শৌচাগার-সহ কোনও যাত্রী প্রতীক্ষালয় নেই এটা ভেবে অবাক লাগছে। এখানকার পুরসভার ভাবা উচিত।”
কোথাও বিশ্রামাগার থাকলেও নেই শৌচাগার। আবার রাস্তার একধারে বিশ্রামাগার থাকলে অন্য ধারে নেই। ফলে, ভোগান্তির শেষ থাকে যাত্রীদের। পুরাতনবাজারে বাসস্টপে রোদ মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা খরিদার ব্যবসায়ী নিশিকান্ত দে বললেন, “অটোর জন্য অপেক্ষা করছি। রাস্তার এই লেনে বিশ্রামাগার নেই। সমস্যা হচ্ছে।” শহরের ইন্দা মোড়ে প্রতিদিন দূর দূরান্তের মানুষ আসেন বাস ধরতে। কিন্তু সেখানে প্রতীক্ষালয়ে ভাঙাচোরা হওয়ায় যাত্রীদের সেই রাস্তাতেই দাঁড়াতে হয়। গড়বেতার বাসিন্দা শুভজিৎ দত্ত বলেন, “চাকরির পরীক্ষা দিতে খড়্গপুরে এসেছিলাম। ইন্দার এই বাসস্টপে তো কুকুর শুয়ে থাকে। রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি।”
সমস্যা মানছেন খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারও। তিনি বলেন, “শীঘ্রই শহরে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী আসবেন। আমরা বাসস্টপ ও বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী প্রতীক্ষালয়, শৌচাগার-সহ পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রস্তাব দেব। রাজ্য টাকা দিলে কাজ হবে। না হলে আমাদের তহবিল থেকে যতটা সম্ভব কাজ করার চেষ্টা করব।”