লাগাম টানতে উদ্যোগ প্রশাসনের

অনুমতি ছাড়াই ধান জমিতে ভেড়ি

ছিল চাষের জমি, রাতারাতি তা বদলে গিয়েছে মেছো-ভেড়িতে। গত কয়েক বছরে উপকূলবর্তী কাঁথি, রামনগর, খেজুরি, নন্দীগ্রাম, হলদিয়ায় ক্রমশ বেড়েছে এ ভাবে মাছ চাষের প্রবণতা। ধান চাষের জমিকে ভেড়ি দেওয়ায় জেলার বেশিরভাগ এলাকায় চাষ জমির পরিমাণ কমে গিয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৪
Share:

ভেড়িতে চলছে মাছ চাষ। কাঁথিতে। — নিজস্ব চিত্র।

ছিল চাষের জমি, রাতারাতি তা বদলে গিয়েছে মেছো-ভেড়িতে। গত কয়েক বছরে উপকূলবর্তী কাঁথি, রামনগর, খেজুরি, নন্দীগ্রাম, হলদিয়ায় ক্রমশ বেড়েছে এ ভাবে মাছ চাষের প্রবণতা। ধান চাষের জমিকে ভেড়ি দেওয়ায় জেলার বেশিরভাগ এলাকায় চাষ জমির পরিমাণ কমে গিয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি।

Advertisement

অভিযোগ, কৃষকদের কাছ স্বল্প মেয়াদী লিজে ওই সব জমি নিয়ে নিচ্ছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভেড়ির সরকারি অনুমোদন নেই তাঁদের। জেলা জুড়ে এ ধরনের ভেড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সেগুলি থেকে রাজস্ব আদায় করতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য দফতর।

প্রশাসন সূত্রে খবর, ভেড়িগুলিকে চিহ্নিত করা হবে। তারপর সেগুলি সরকারিভাবে নথিভুক্ত করতে ভেড়ি মালিকদের কাছ থেকে লাইসেন্স ফি বাবদ রাজস্ব আদায়ের বিষয়েও উদ্যোগী হচ্ছে প্রশাসন। এ জন্য জেলার বিভিন্ন ব্লকে মৎস্য দফতরের আধিকারিকরা সমীক্ষা শুরু করেছেন। তালিকায় ভেড়িগুলির নির্দিষ্ট অবস্থান, জমির পরিমাণ, কী ধরনের মাছ চাষ হচ্ছে, জমি ও ভেড়ির মালিকদের নাম-সহ বিভিন্ন তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। জলাশয়গুলির অবস্থান চিহ্নিত করতে গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়েই তালিকা তৈরি হচ্ছে। এরফলে কোনও এলাকার নির্দিষ্ট জলাশয়ের বিস্তারিত বিবরণ দ্রুত জানা যাবে। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রশান্ত অধিকারী বলেন, ‘‘মাছ চাষের জলাশয়গুলির তথ্য নথিভুক্ত করে রাজস্ব আদায় করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’’

Advertisement

জেলা মৎস্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের ২৫ টি ব্লকের মধ্যে ২১ টি ব্লকেই এখন ভেনামি, বাগদা-সহ নানা ধরনের মাছের চাষ করা হচ্ছে। বিশেষত উপকূলবর্তী কাঁথি-১, ৩, রামনগর-১, ২, খেজুরি, নন্দীগ্রাম-১, ২, দেশপ্রাণ, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর ব্লকগুলিতে মাছ চাষের রমরমা। মূলত আবাদি জমির একাংশের মাটি তুলে অগভীর জালশয়ে বানিয়ে এই মাছ চাষ চলছে। জানা গিয়েছে, সারা জেলার প্রায় ৩৫ হাজার জলাশয় তৈরি করা হয়েছে মাছ চাষের জন্য। প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১৬ হাজার মৎসচাষি রয়েছেন।

এই পদ্ধতিতে জেলায় গত বছর প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন ভেনামি ও বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল। যার একটা বড় অংশ জাপান, ভিয়েতনাম, আমেরিকা ও আরবদেশগুলিতে রফতানি হয়েছে। কিন্তু এই সব ভেড়ির সরকারি অনুমোদন নেই। সেই সঙ্গে ধান জমি বাঁচাতেও এই পদক্ষেপ করছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেই যথেচ্ছ ভেড়ি তৈরির প্রবণতাতেও খানিকটা লাগাম পরানো যাবে।’’ বাগদা চাষি এসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক মদনমোহন মণ্ডলও প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই সরকারি ভাবে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কর আদায় করা হোক। কিন্তু মাছ চাষের জন্য বাণিজ্যিক হারে কর আদায় করা চলবে না বলে প্রশাসনের কাছে আগেই দাবি জানিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, মূলত গরিব চাষিরাই মাছ চাষ করে। জেলায় মাছ চাষের সঙ্গে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের জীবিকা জড়িত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে। তাই সরকারকে সহানুভূতিশীল হতেই হবে। তাঁরা চাইছেন লাইসেন্স বা রাজস্ব আদায়ে সরকার যেমন সচেষ্ট তেমই মাছ চাষি হিসেব স্বীকৃতিও দেওয়া হোক তাঁদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement