শনি-রবি, তারপরেই ভোটের ছুটি, পয়লা বৈশাখ। প্রায় গোটা সপ্তাহটাই ছুটি ছুটি আবহ পুরসভায়। তার জেরে শহর জুড়ে অব্যবস্থার ছবি। নজরদারির অভাবে এ দিক সে দিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আবর্জনা। নতুন বছরের শুরুতেই জেরবার খড়্গপুরের বাসিন্দারা।
বিরোধীরা অবশ্য অভিযোগ করছেন, পুরপ্রধান থেকে পুর-পারিষদ— সকলই তো তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। তাই পুরপরিষেবার উপর নজরদারি থাকবে কী করে? সাফাইকর্মীদের কাজকর্মও তো দেখা হয়নি। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের দাবি, সাফাইকর্মীদের ওপর নজরদারি চালানোর কথা স্থানীয় কাউন্সিলরদের।
শহরে আবর্জনা সমস্যা নতুন নয়। এখনও বর্জ্য ব্যবস্থাপন পদ্ধতি গড়ে তোলা যায়নি পুর এলাকায়। ফলে আবর্জনা পড়ে থাকে ভ্যাটেই। দিনের পর দিন সে আবর্জনা ছড়িয়ে যায় রাস্তায়। ক্রমশ জনবসতি বাড়ছে, আবর্জনা বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০১৫ সালের গোড়ায় কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ড খড়্গপুর আইআইটি-র ‘সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি আন্ত্রেপ্রেনিওর পার্কে’ (স্টেপ)-এর সঙ্গে আলোচনা করেছিল। ঠিক হয় আইআইটি আবর্জনা থেকে বায়ো গ্যাস, সার তৈরি করবে। তার তিন মাসের মধ্যেই ক্ষমতা বদলে যায়। নতুন পুরবোর্ডে এসে তৃণমূলের নতুন ভাবনা শুরু করেছে। পুরনো কথাবার্তা চাপা পড়ে গিয়েছে। তাই পরিকল্পনাস্তরে বারবার ধাক্কা খাচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপন পদ্ধতি চালুর প্রকল্প।
গত এক মাসে বর্জ-সমস্যা আরও করুণ হয়েছে। অভিযোগ, প্রায় এক মাস পুরসভার পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান, বিভিন্ন বিভাগের পুর পারিষদ-সহ জন প্রতিনিধিরা ব্যস্ত থেকেছেন দলীয় প্রার্থীর প্রচারে। সেই সঙ্গে গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চলেছে ছুটি। বুধবার পুরসভা খোলা হলেও ভোটের ধকল কাটিয়ে কাজের প্রস্তুতি শুরু করতেই বেলা গড়িয়ে গিয়েছে। জন প্রতিনিধিদের অনেককেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আলোচনায় মগ্ন থাকতে দেখা গিয়েছে। এর পরে আজ, বৃহস্পতিবার আবার ছুটি। শুক্রবার রাম নবমী। তবে ওই দিন ছুটি থাকবে কিনা সে বিষয়ে এখনও নোটিস আসেনি বলে জানিয়েছেন পুরকর্মীদের একাংশ। তবে ছুটি না-থাকলেও সপ্তাহান্তে কাজ যে বিশেষ হবে না তা সকলেই মানছেন।
গত কয়েক দিনের প্রবল গরমে জমে থাকা পচনশীল আবর্জনা থেকে ছড়িয়েছে দূষণ। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঝরিয়াপুকুরের বাসিন্দা শিক্ষিকা শুভ্রা গুপ্ত বলেন, “ওয়ার্ডে ভ্যাট উপচে গিয়েছে। বাড়ির পাশের একটি খালি জমিতে পাড়ার সকলে আবর্জনা ফেলে যাচ্ছেন। গত এক মাস আমরা দুর্গন্ধে নাজেহাল। পুরসভায় বারবার জানিয়েও লাভ হয়নি।” রেল ওয়ার্ডেও একই সমস্যা। রেলের গোলবাজার চাঁদনিচক এলাকার ব্যবসায়ী রঞ্জন উপাধ্যায় বলেন, “বছরভর এ ভাবেই আবর্জনা পড়ে থাকে। মাঝে মধ্যে পুরসভা আবর্জনা নিয়ে যায়। এখন সে টুকুও দেখছি না।”
নজরদারি নেই। নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় রাস্তার ধারে জমছে আবর্জনার স্তূপ। তীব্র গরমে ছড়াচ্ছে দূষণও।
(উপরে বাঁ দিকে) খড়্গপুরে হিতকারিনী স্কুলের সামনে, (উপরে ডান দিকে) মালঞ্চয়, (নীচে) গোলবাজারের সামনে।
ছবি:রামপ্রসাদ সাউ।
নগরোন্নয়নের আশা জাগিয়ে ১৯৫৪ সালে খড়্গপুর পুরসভা গঠন হয়েছিল। এক সময়ে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাস্তার ধারে ফাঁকা জায়গায় ভ্যাট তৈরি করা হয়েছিল। বাম পরিচালিত পুরসভা তখন গোকুলপুরের কাছে একটি জমিতে শহরের সব আবর্জনা ফেলত। কিন্তু জমিতে শকুন, চিলের উপদ্রবে কলাইকুণ্ডার বায়ুসেনার বিমান চলাচল ব্যহত হওয়ায় অভিযোগ উঠে। বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই ভ্যাট। এর পর থেকে শহরে আর কোনও নির্দিষ্ট আবর্জনা ফেলার জায়গা গড়ে তোলা যায়নি।
প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বিরোধী দলনেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “আমরা আইআইটি-র সঙ্গে মউ সাক্ষর করেছিলাম। এখন সেই প্রকল্প নিয়ে পুরসভার ভাবনাচিন্তা দেখছি না।” নতুন তৃণমূল পুরবোর্ড অবশ্য সমস্যার কথা মানছেন। তাদের দাবি, ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে গ্রামীণ এলাকা গোপালীর কাছে আবর্জনা ফেলার জন্য জমি চেয়ে চিঠি দিয়েছে। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “আমরা গোপালীতে জমি পেলে আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা করব। এখন নির্বাচনী বিধিতে এসব কাজ আটকে রয়েছে।”