ঝাড়গ্রাম
প্রাপ্তির ঝুলিতে আরও এক!
ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র দিনেই আত্মপ্রকাশ করেছে পাহাড়ের ‘ড্রিম গার্ল’ কালিম্পং। নতুন জেলা ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালিম্পংকে ডেকেছিলেন এই নামেই। এ বার নববর্ষের আগে মমতার সাধের জঙ্গলমহলের প্রাপ্তি নতুন জেলা ঝাড়গ্রাম।
রাজ্যের ২২তম জেলা ঝাড়গ্রামের ভূমিষ্ঠ হওয়া আর ক্ষণিকের অপেক্ষা। দ্বিমত থাকলেও নতুন জেলার নামকে স্বাগত জানিয়েছেন অধিকাংশ বাসিন্দাই। নতুন প্রজন্মের সিংহভাগ বাসিন্দাদের দাবি ছিল, নতুন জেলার নাম হোক শুধু ঝাড়গ্রাম। জঙ্গলমহলের বিশিষ্টজনদেরও অনেকে ঝাড়গ্রাম নামের পক্ষেই সহমত পোষণ করেছেন।
ঝাড়গ্রামের প্রবীণ আয়ুর্বেদ চিকিৎসক অধীরকুমার পাণি বলছেন, “জঙ্গলমহলের একটা স্বতন্ত্র ঐতিহ্য রয়েছে। প্রাক-স্বাধীনতা যুগে অবিভক্ত মেদিনীপুর নিয়ে যে আবেগের কথা বলা হচ্ছে, সেই আবেগের ঢেউ জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসীদের সে ভাবে স্পর্শ করেনি। সম্ভবত, এ জন্য ঝাড়গ্রামে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনও দানা বাঁধেনি।”
মানিকপাড়া কলেজের বাংলার অতিথি-শিক্ষিকা ছবি মাইতি-র কথায়, “ঝাড়গ্রামের কয়েকশো বছরের নিজস্ব সংস্কৃতির শিকড়াটা বেশ সমৃদ্ধ। নিজের পরিচয়েই ঝাড়গ্রাম পূর্ণতা পাক।” একইভাবে, ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া পার্বতী বেরা, নির্বাণ বসু বলছেন, “এখন স্মাট লুকের যুগ। নামের ভারে আমরা ভারাক্রান্ত হতে চাই না। শুধু ঝাড়গ্রামই ভাল।”
২০০২ সালের ১ জানুয়ারি মেদিনীপুর ভাঙার সময়ও অনেকেই এর বিপক্ষে ছিলেন। এ বারও যে বিপরীত মত নেই তা নয়। মেদিনীপুরের প্রাচীন ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতির প্রবীণ গবেষক মধুপ দে জানাচ্ছেন, ১৮০৫-১৮৩৩ সাল পর্যন্ত জঙ্গলমহল জেলার অস্তিত্ব ছিল। সুতরাং ইতিহাসের নিরিখে নতুন ঝাড়গ্রাম জেলার নাম মেদিনীপুর-জঙ্গলমহল হলে যুক্তিযুক্ত হত।
নতুন জেলা
• আয়তন: ৫৩৯.৬৪ বর্গ কিলোমিটার।
• মহকুমা: একটি।
• ব্লক: আটটি। বেলপাহাড়ি, লালগড়, ঝাড়গ্রাম, জামবনি, বেলিয়াবেড়া, গোপীবল্লভপুর, সাঁকরাইল, নয়াগ্রাম।
• জেলাশাসক: আর অর্জুন।
• এসপি: অভিষেক গুপ্ত।
মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তথা বিশিষ্ট অধ্যাপক প্রণবেশ জানা বলেন, “মেদিনীপুর নামটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক বরণীয়দের স্মৃতি ও তাঁদের সার্বিক অবদান। নতুন জেলার নামকরণের আগে রাজ্য সরকারের জনমত যাচাই করা উচিত ছিল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মেদিনীপুর কথাটা যোগ না করে ঐতিহাসিক ভুল করা হল। আমরা রাজ্য সরকারের কাছে ফের দাবি জানাব।”
তবে মতভেদ ভুলে এখন অবশ্য নতুন জেলা গঠনের আনন্দেই বুঁদ হয়ে থাকতে চাইছে জঙ্গলমহলের আট থেকে আশি। আগামী ৪ এপ্রিল ঝাড়গ্রাম কলেজ সংলগ্ন মাঠের উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে নতুন ঝাড়গ্রাম জেলার সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে নতুন প্রজন্মেরও মুখ মুখে ফিরছে, ‘আমার জেলা ছোট্ট নাম, সবুজ শালের ঝাড়গ্রাম।’