ধৃতদের আদালতে তোলা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
নবজাতকের শারীরিক সমস্যা ছিল। বাড়িতে প্রবল আর্থিক অনটনও রয়েছে।
এই জোড়া সঙ্কটেই সদ্যোজাত পুত্রসন্তানকে আবর্জনার স্তূপে ফেলে পালাচ্ছিলেন এক দম্পতি। শেষ রক্ষা হয়নি। হাতেনাতেই ধরা পড়ে গিয়েছেন। পরে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ওই দম্পতি ও তাঁদের এক সহযোগীকে। আর ঘাটাল শহরের ময়রাপুকুরে মর্গ লাগোয়া আবর্জনার স্তূপ থেকে ওই সদ্যোজাত শিশুপুত্রকে উদ্ধার করে ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দম্পতির নাম সিন্টু ও প্রিয়া দে। তাঁদের বাড়ি রামজীবনপুর পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁতি পাড়ায়। অন্য অভিযুক্ত গণেশ দোলই ঘাটাল থানার গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা। ধৃতদের মঙ্গলবার ঘাটাল আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ৮ ডিসেম্বর প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হন প্রিয়া। ৯ ডিসেম্বর সাধারণ প্রসবে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন ওই তরুণী। জন্মের পরই শিশুটির শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। ওই রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য সদ্যোজাতকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তারপর সেখানেই ভর্তি ছিল সে। তবে সোমবার হাসপাতাল থেকে জোর করে ছুটি করিয়ে নেন মা-বাবা। তারপর বাড়ি না ফিরে ওই দম্পতি মেদিনীপুর থেকে সোজা ঘাটাল কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছন। তারপর ময়রাপুকুরে মর্গ লাগোয়া ডাস্টবিনের কাছে জলা জমিতে ছুঁড়ে ফেলে দেন শিশুটিকে।
আপাতত ওই নবজাতক ঘাটাল সুপার স্পেশালিটিতে ভর্তি। হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “একে কনকনে ঠান্ডা। তার উপর দীর্ঘক্ষণ নোংরা, জলা জায়গায় পড়ে ছিল। ওর অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসা চলছে।”
কিন্তু কেন নিজের সন্তানকে এ ভাবে ফেলে দিলেন বাবা-মা?
পুলিশকে ধৃতেরা জানিয়েছেন, বছর খানেক আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। সিন্টু রামজীবনপুরে তাঁতের শাড়ি তৈরির জোগাড়ের কাজ করেন। মাসে দু’-চার দিন কাজ পান। বাড়িতে বৃদ্ধা মা-ও রয়েছেন। নিজের বাড়ি নেই। মামা বাড়িতেই থাকেন তাঁরা। তীব্র অনটন। কোনও মতে সংসার চলে। তার উপর সদ্যোজাতের শারীরিক নানা সমস্যা থাকায় চিকিৎসার চালানোর সাধ্য তাঁদের নেই। তাই শিশুটিকে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দম্পতির দাবি, বাসস্ট্যান্ডে নেমে গণেশ দোলই নামে ওই যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয়। সে-ই পরিত্যক্ত ওই জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল বলে দাবি।
ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম মহতী বলেন, “আর্থিক অনটন রয়েছে। তার সঙ্গে বাচ্চাটার শারীরিক সমস্যায় বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে বাবা-মায়ের উপর। সেই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে এই পদক্ষেপ করেছেন তাঁরা।”
সবটা জেনে তৎপর হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনও। ধৃতদের বাড়ির খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়েছে। রামজীবনপুর পুরসভার প্রশাসক নির্মল চৌধুরী বলেন, “ছেলেটির আর্থিক অবস্থা সত্যিই খারাপ। উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।” আর চাইল্ড লাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটর বিশ্বনাথ সামন্ত বলেন, “অভাব থাকতেই পারে। তা বলে নিজের শিশুপুত্রকে ফেলে দেওয়ার মানসিকতা আসবে কেন? সচেতনতার অভাব থেকেই এমনটা ঘটেছে।”