বাড়ির সামনে পড়ে তরুণীর ওড়না । নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের এক তরুণীর উপর অ্যাসিড হামলার ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না দাসপুরের নন্দনপুরের বাসিন্দারা। গভীর রাতে অ্যাসিডে পোড়ার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পুকুরে নেমে মেয়েটির আর্ত চিৎকারও ভুলতে পারছেন না পড়শিরা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের ওই তরুণী। সকাল আটটা নাগাদ সহপাঠীদের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল জানতে স্কুল সংলগ্ন সাইবার কাফেতে যান তিনি। দেখা যায়, ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন তিনি। মাধ্যমিকেও স্টার পেয়েছিলেন ওই তরুণী। এমন কৃতী ছাত্রীর উপর অ্যাসিড হামলায় হতবাক তাঁর সহপাঠীরা। ওই তরুণীর এক সহপাঠীর কথায়, “ওর এ বার বাংলায় অনার্স পড়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।’’ নন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা গৌতম মণ্ডল আবার বলেন, “ আমরা চাই দোষীদের কঠোর শাস্তি হোক। আর মেয়েটা দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক।’’
মেয়ের জীবনে এই আকস্মিক আঘাতে বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা। শনিবার সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বাড়ির এক কোণে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। বহুবার কথা বলার চেষ্টা করার পরেও মুখে রা কাড়লেন না। অনেক পরে একটু ধাতস্থ হয়ে বললেন, “সব ছেলেমেয়েরা এ বার হই হই করে কলেজে ফর্ম তুলতে যাবে। আমার মেয়েও যেত। কিন্তু কী যে হবে, বুঝতে পারছি না।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন ওই তরুণী। চাষজমি রয়েছে। গরুর দুধ বিক্রি করেও আয় হয়। সামনেই মাটির বাড়ি ভেঙে পাকা বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। স্কুলেও ভাল মেয়ে হিসেবেই পরিচিতি ছিল ওই ছাত্রী। নন্দনপুর হাইস্কুলের শিক্ষক মলয় সাহা বলেন, “বরাবরই ও পড়াশোনায় ভাল। ব্যবহারেও বিনয়ী। কেন এমন হল বুঝতে পারছি না।’’
শুক্রবার রাত পর্যন্ত পাড়ার কাকিমা, বৌদিদের সঙ্গে গল্প করেছেন ওই তরুণী। রাতে খাওয়ার সময়ও পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন কলেজে ভর্তি নিয়ে। তারপরই ওই ঘটনা। অ্যাসিড হামলার পরে শরীরের জ্বালা জুড়োতে সামনের পুকুরে নেমে পড়েছিলেন ওই তরুণী। তাঁর সেই বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার এখনও প্রতিবেশীদের কানে বাজছে। ওই তরুণীর পড়শি পদ্মা বেরার কথায়, “শুক্রবার রাত ন’টা পর্যন্ত ও আমার সঙ্গে গল্প করেছে। তারপর রাতে ওর চিৎকার শুনে দেখি এই কাণ্ড। মেয়েটা এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেই হয়।’’