অভিজিতের দেহ। নিজস্ব চিত্র
সৈকত শহরের হোটেলের বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হল এক যুবকের দেহ। অভিজিৎ দত্ত (২৮) নামে হাওড়ার বাসিন্দা ওই যুবক পেশায় গাড়ি চালক ছিলেন। হাওড়ারই এক চিকিৎসক দম্পতির গাড়ির চালক হিসাবে বৃহস্পতিবার রাতে দিঘায় এসেছিলেন অভিজিৎ। সঙ্গে ছিলেন ওই দম্পতির এক আত্মীয়। অভিজিতের মৃত্যুর পরে তাঁদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। অভিজিতের দাদা সুরজিতের দাবি, তাঁর ভাইকে খুন করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে তিনি দিঘা থানায় খুনের অভিযোগও দায়ের করেছেন ওই তিনজনের বিরুদ্ধে ।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিজিতের বাড়ি লিলুয়ার চামরাইলে। চিকিৎসক দম্পতি সুজয় দত্ত এবং পায়েল দত্ত লিলুয়ারই বিরাডিঙি এলাকার বাসিন্দা। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুজয় জোকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের সঙ্গে দিঘায় গিয়েছিলেন পায়েলের ভাই টিঙ্কু মণ্ডল। তিনি চামরাইলের বাসিন্দা। টিঙ্কুই গত রবিবার অভিজিতকে ওই দম্পতির কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে দাবি। এর পরে তাঁকে গাড়ি চালানোর জন্য নিযুক্ত করেন সুজয়বাবুরা।
বৃহস্পতিবার রাতে সুজয়-পায়েলরা নিউ দিঘার একটি হোটেলে উঠেছিলেন। সেখানে দু’টি ঘর বুক করা হয়েছিল। পুলিশের দাবি, আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, গভীর রাত পর্যন্ত সকলেই একটি ঘরে বসে মদ্যপান করেন। পরে পায়েলদেবী ঘুমনোর জন্য অন্য ঘরে চলে যান। কিন্তু অভিজিৎ, সুজয় এবং টিঙ্কু ওই ঘরেই ঘুমিয়ে পড়েন।
আটক ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ভোরে অভিজিতের ঘুম ভেঙে যায়। তাঁদের অভিযোগ, ওই সময় তিনি পায়েলের ঘরে গিয়ে তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। ঘটনায় সুজয় ও টিঙ্কু গিয়ে তীব্র ভর্ৎসনা করেন অভিজিতকে। জেরায় ওই দম্পতির দাবি, এরপরে তাঁরা ওই ঘরেই অভিজিৎকে আটকে রেখে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে অন্য ঘরে গিয়ে সকলে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এ দিন সকালে দেখা যায়, ভিতর থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন অভিজিৎ। বারবার ডাকাডাকিতে সাড়া না মিললে চিকিৎসক দম্পতি হোটল কর্তৃপক্ষ জানান। কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেন। দিঘা থানার পুলিশ ঘরের দরজা ভেঙে অভিজিতের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায়।
পুলিশ জানিয়েছে, হোটেলের ২০৩ নম্বর ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে বিছানার চাদরের ফাঁস দেওয়া অবস্থায় অভিজিতের দেহ মিলেছিল। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পরেই সঞ্জয়, পায়েল এবং টিঙ্কুকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এ দিন সকালে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে দিঘার যান সুরজিৎ-সহ পরিজনেরা। সুরজিৎ বলেন, ‘‘ভাই আত্মহত্যা করতেই পারে না। পুরো বিষয়টি সাজানো। ওঁকে খুন করা হয়েছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, ওই দিন বিকেল ৪টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন অভিজিৎ। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ফোন করে মায়ের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লিলুয়া থানার মাধ্যমে মৃতের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়। দিন সাতেক আগে অভিজিৎ গাড়ির চালক হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিল বলে ওই চিকিৎসক দম্পত্তি পুলিশকে জানিয়েছেন।’’