ইতিহাসের শিকড় রক্ষায় কলেজে মিউজিয়াম

 ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে শহিদ হয়েছিলেন এই কলেজের পাঁচজন ছাত্র। এই কলেজেরও পথ চলা শুরু পরাধীন ভারতেই। যত দিন গড়িয়েছে তত সমৃদ্ধ হয়েছে এই কলেজের ইতিহাস।  পুরনো ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখতে মেদিনীপুর কলেজে তৈরি করা হল মিউজিয়াম।

Advertisement

সৌমেশ্বর মণ্ডল

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৬
Share:

ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে শহিদ হয়েছিলেন এই কলেজের পাঁচজন ছাত্র। এই কলেজেরও পথ চলা শুরু পরাধীন ভারতেই। যত দিন গড়িয়েছে তত সমৃদ্ধ হয়েছে এই কলেজের ইতিহাস। পুরনো ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখতে মেদিনীপুর কলেজে তৈরি করা হল মিউজিয়াম। কারও কাছে পুরনো কোনও নথি, মুদ্রা, প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিস থাকলে তা দান করার জন্যও জেলার বাসিন্দাদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। পুরনো এই সব সামগ্রী কলেজের মিউজিয়ামেই রাখা হবে।

Advertisement

গত অক্টোবর মাসে মেদিনীপুর কলেজের বিবেকানন্দ হলের দোতলায় তৈরি করা হয়েছে মিউজিয়াম। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিই মিউজিয়ামটি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে।

কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন সুস্থনাথ জানা ও জয়ন্ত চক্রবর্তী। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘আধুনিক সভ্যতার চাপে ইতিহাসের শিকড় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখনকার ছেলেমেয়েদের ইতিহাসের শিকড়ের সন্ধান দেওয়ার লক্ষেই আমাদের এই উদ্যোগ।’’

Advertisement

কলেজের সঙ্গে জড়িত নানা পুরনো জিনিস ঠাঁই পেয়েছে মিউজিয়ামে। ১৮৭৩ সালে পথ চলা শুরু মেদিনীপুর কলেজের। ১৮৮২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা অনুমোদনের চিঠি ঠাঁই পেয়েছে মিউজিয়ামে। রয়েছে ১৮৪২ সালে আইএসসি পরীক্ষার ফলাফল। ১৯১৪ সালে মহিষাদলের রাজা বাহাদুর মেদিনীপুরে তৈরি ‘মহিষাদল হল’ জেলাশাসক এফবি বার্ডলি বার্টকে দান করেছিলেন। পরে সেটিই মেদিনীপুর কলেজের ভবন হয়ে যায়। রয়েছে সেই ফলকের ছবিও। বিদেশি দ্রব্য বর্জনের জন্য ১৯৪৪ সালে সাবান, টুথপেস্ট, সুগন্ধি তেল তৈরির জন্য কলেজে ‘শিল্প বিভাগ’ তৈরি হয়। ১৯৪৪ সালে কলেজে আইএ, আইএসসি পড়ার জন্য বার্ষিক কত টাকা দিতে হত রয়েছে তার নথিও।

এখানেই শেয নয়, ইতিহাসপ্রেমী পড়ুয়াদের জন্য রয়েছে আরও আকর্ষণ। ১৯৪৪ সালে বিমল নামহাতার নেতৃত্বে বিষ্ণুপুরে অমর শিল্ড ফুটবল ফাইনাল ম্যাচে ‘গোরা’ (ব্রিটিশ) দলকে হারিয়েছিল কলেজের দল। ১৯৪২ সালে বন্যায় কাঁথি, তমলুকে অনেক মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। সেই সময় কলেজের উদ্যোগে ‘দেবদাস’ সিনেমা দেখিয়ে ২৫০ টাকা ওঠে। সেই টাকা রামকৃষ্ণ মিশনের তহবিলে দান করা হয়েছিল। কলেজের পুরনো দিনের নানা তথ্যও মিউজিয়ামে রাখা আছে।

স্বাধীনতা সংগ্রামে শহিদ কলেজের পাঁচজন ছাত্র দীনেশ গুপ্ত, প্রদ্যোত ভট্টচার্য, মৃগেন দত্ত, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী ও নির্মল জানার ছবি মিউজিয়ামে জায়গা পেয়েছে। কলেজের সব থেকে পুরনো ‘থাক ভবন’ সম্প্রসারণের জন্য মাটি খোঁড়া হলে ব্রিটিশদের ব্যবহার করা হ্যান্ড মাইক ও বেসবল খেলার ব্যাট উদ্ধার হয়। কলেজের মধ্যে একটি ছোট কামানও উদ্ধার হয়েছিল। উদ্ধার হওয়া এইসব জিনিসও মিউজিয়ামে জায়গা পেয়েছে।

কলেজে সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের জন্য সপ্তাহে দু’দিন মিউজিয়াম খোলা থাকবে। কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মৌসুমী দাস বলেন, ‘‘মিউজিয়ামে কলেজের অনেক পুরনো তথ্য রয়েছে। এখানে না এলে এ সব জানতেই পারতাম না।’’ কলেজের অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘কলেজের পুরনো নথি মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে। বর্তমান প্রজন্মকে জেলার ইতিহাস জানানোর জন্যই মিউজিয়ামকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছি।’’ তাঁর আবেদন, ‘‘জেলাবাসীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, কারও কাছে পুরনো দিনের কোনও নথি, পুস্তক, দুষ্প্রাপ্য ছবি, প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিস থাকলে কলেজের মিউজিয়ামে দান করুন। দ্রব্যটি দাতার নাম-সহ মিউজিয়ামে রাখা থাকবে। কলেজের বাইরের কেউ মিউজিয়াম ঘুরে দেখার জন্য আবেদন করলে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা হবে।’’ একইসঙ্গে গোপালবাবুর আশ্বাস, ‘‘কারও দান করা নথি ও মূল্যবান জিনিস যত্ন সহকারেই মিউজিয়ামে রাখা থাকবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement