এখন ব্লিচিংয়ে কী লাভ, প্রশ্ন সিংহপুরের

ঝুমি নদীর তীরে মাটি আর বাঁশের বেড়া দেওয়া বাড়ি। আশপাশে কোনও নিকাশি নালা নেই। নোংরা জল আর বর্জ্য গিয়ে সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ে। ঘাটাল শহরের সিংহপুরের এই বাড়ির ছেলে বছর দশেকের সৌরভ ধাড়াই মারা গিয়েছে মশাবাহী রোগ জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫৪
Share:

ঝুমি নদীর তীরে মাটি আর বাঁশের বেড়া দেওয়া বাড়ি। আশপাশে কোনও নিকাশি নালা নেই। নোংরা জল আর বর্জ্য গিয়ে সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ে। ঘাটাল শহরের সিংহপুরের এই বাড়ির ছেলে বছর দশেকের সৌরভ ধাড়াই মারা গিয়েছে মশাবাহী রোগ জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে। গত শুক্রবার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সৌরভের মৃত্যু হয়েছে কলকাতার হাসপাতালে। তারপর সোমবার তার বাড়িতে গিয়ে আশপাশে ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে এসেছেন পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। যা দেখে পাড়া-প্রতিবেশীরা ক্ষোভের সুরে বলছিলেন, “মশার কামড়েই ছেলেটা মরে গেল। এখন আর ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে কী লাভ!’’

Advertisement

এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে যে নিয়মিত ব্লিচিং ছড়ানো হয় না তা পরোক্ষে মেনে নিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর নেপাল ঘোড়ুইও। তাঁর বক্তব্য, “মশাবাহী রোগে এ ভাবে মৃত্যু হবে জানলে নিয়ম করেই ব্লিচিং পাউডার ছড়াতাম।’’

সিংহপুরের রাজবংশী পাড়ায় বাড়ি সৌরভদের। তার বাবা মদন ধাড়া নদীতে নেমে মাছ ধরে এবং অন্যের জমিতে মজুর খেটে সংসার চালান। ছেলেকে হারিয়ে সব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে বছর চল্লিশের মদনবাবুর। সোমবার সকালে বাড়িতে বসে কান্নাভেজা গলায় তিনি বলছিলেন, ‘‘প্রতিবার ওকে সাইকেলে চাপিয়ে নববর্ষে হালখাতা করতে দোকানে যেতাম। মিষ্টির প্যাকেট হাতে পেয়ে ভীষণ খুশি হত। এ বার তো নববর্ষের আগেই ও চলে গেল।’’ ছেলের চিকিৎসার জন্য এতদিন কলকাতার ফুটপাথেই পড়েছিলেন সৌরভের মা অপু ধাড়া। শুক্রবার রাতে ছেলের মৃতদেহ বাড়িতে আনার পরে আর বিছানা থেকে ওঠেননি তিনি। কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

Advertisement

শুধু ধাড়া পরিবার নয়, গত শুক্রবার থেকে গোটা রাজবংশী পাড়ারই মন খারাপ। পড়শি বধূ কাজল ধাড়া বলছিলেন, “সৌরভ খুব মিশুকে ছিল। মিওর গলা আর শুনতে পাব না, ভাবতে পারছি না।’’ রাজবংশী পাড়ার বাসিন্দা প্রশান্ত ধাড়ার কথায়, “সকাল থেকে রাত পাড়া দাপিয়ে বেড়াতো। এখন গোটা পাড়া সুনসান হয়ে গিয়েছে।’’

গত বছর ঘাটালে ডেঙ্গিতে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল। এ বার মশাবাহী অসুখ ঠেকাতে পুরসভাগুলির কাছে আগাম নির্দেশ এসেছে নবান্ন থেকে। কিন্তু তারপরেও মশা মারতে ঠুঁটো ঘাটাল পুরসভা।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, স্ত্রী কিউলেক্স মশা থেকে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু ছড়ায়। শুয়োর ও পরিযায়ী পাখিরা এই জীবাণুর বাহক। এ ছাড়া নোংরা জল এবং কচুরিপানা ভর্তি পুকুরও এই মশার আঁতুরঘর। জেলার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “কী ভাবে সৌরভের শরীরে এই রোগের জীবাণু ঢুকলো তা পরিষ্কার নয়। তবে আতঙ্কের কিছু নেই। স্বাস্থ্য দফতর সতর্ক রয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement